এই পোস্টে আমরা দশম শ্রেণীর ভুগোলের প্রথম অধ্যায় এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করবো।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. বহির্জাত প্রক্রিয়া কাকে বলে ?
উত্তরঃ- বহির্জাত প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণকারী প্রধান উপাদান গুলির মধ্যে রয়েছে – নদী, হিমবা্হ , বায়ু, ,সমুদ্র তরঙ্গ ইত্যাদি । বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি সমূহের দ্বারা ক্রিয়াশীল হয়ে বিভিন্ন রকমের ভূমিরূপ পরিবর্তন ঘটায়। এই প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর প্রত্যেকের কাজের পদ্ধতি বা ধরণ আলাদা আলাদা হয়।ভূপৃষ্ঠের উপর এই নগ্নীভবন পদ্ধতিকে বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে ।
২. পর্যায়ন কাকে বলে ?
উত্তরঃ- পর্যায়ন হল এক কথায় পৃথিবীর অসমতল ভূমিরূপ উঁচু-নিচু ভূভাগ । বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির সাহায্যে ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের দ্বারা ভূপৃষ্ঠের সমতলীকরন।
পর্যায়ন প্রক্রিয়া এর মাধ্যমে ঘটে
ক) আরোহন
খ) অবরোহন
৩. আবহবিকার কি ?
উত্তরঃ- আবহবিকার শব্দটি এসেছে. আবহাওয়। আবহাওয়া বিভিন্ন উপাদান যেমন বৃষ্টিপাত, আদ্রতা , উষ্ণতা এবং বায়ুমন্ডলে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক গ্যাস এর প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে থাকা শিলা সমূহের যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চূর্ণ-বিচূর্ণ এবং রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিয়োজিত হয়ে, সেই স্থানেই পতিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে আবহবিকার বলে।
আবহবিকারের ফলে পদার্থের আয়তন এর পরিবর্তন ঘটে
৪. পুঞ্জিত ক্ষয় কি ?
উত্তরঃ- আবহবিকারের ফলে কখনো কখনো দুর্বল শিলার কিছু অংশ এবং আলগা মাটি ঘর্ষণের প্রভাবে অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর নিচের দিকে অগ্রসর হয়। এই প্রক্রিয়াকে পুঞ্জিত ক্ষয় বলে।
৫. ক্ষয়ীভবন কাকে বলে ?
উত্তরঃ- বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির আঘাতজনিত কারণে যখন কোন শিলা ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অপসারিত হয়, সেই প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে ।
৬. জলচক্র কাকে বলে?
উত্তরঃ- অধঃক্ষেপণ অর্থাৎ বৃষ্টিপাত , তুষারপাত , শিলাবৃষ্টি এছারাও বাষ্পীভবন ,জলীয়বাষ্পের কারণে জল বারিমন্ডল থেকে বায়ুমন্ডলে গিয়ে আবার বারিমন্ডলের ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে জলচক্র বলে।
জলচক্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নদী। আবহাওয়া শুষ্কতা জনিত কারণে নদী শুকিয়ে যায় তবে জলচক্রের ব্যাঘাত ঘটে।
৭. নদী কাকে বলে?
উত্তরঃ- এককথায় নদী কোন মালভূমি উচ্চভূমি থেকে নির্গত বৃষ্টির ধারা অনুযায়ী উচ্চগতি থেকে নিম্ন দিকে আসে ।
যেমন- গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে আমাদের প্রধান নদী গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে ।
৮. উপনদী ও শাখানদী কি?
উত্তরঃ- যখন কোন ছোট নদী বা ক্ষুদ্র জলধারা অপেক্ষাকৃত কোন বৃহৎ জলধারা বা নদীর সাথে মিলিত হয় তাকে উপনদী বলে । যেমন- মহানন্দ হল পদ্মা নদীর একটি উপনদী। যখন কোন বৃহৎ জলধারা নদী থেকে কোন ক্ষুদ্র জলধারা বের হয়ে অন্য কোন নদী, সাগরে বা হ্রাদে পতিত হয় তাকে শাখা নদী বলে। যেমন- রোসেত্তা নীলনদের একটি উল্লেখযোগ্য শাখা নদী ।
৯. জলবিভাজিকা কি?
উত্তরঃ- পাশাপাশি অবস্থিত দুই বা ততোধিক নদী অববাহিকা যখন কোন উঁচু পাহাড়, পর্বত , আলবুম ইত্যাদি দ্বারা পৃথক হয়ে যায় তাকে জলবিভাজিকা বলে। যেমন- নর্মদা ও তাপ্তি নদীর দুটি সাতপুরা পর্বত দ্বারা পৃথক হয়েছে।
১০. উচ্চগতি নিম্নগতির দুইটি করে বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ- উচ্চগতিঃ- ক) উচ্চগতিতে খরস্রোতা হয়।
খ ) উচ্চগতিতে নদীর কেবলমাত্র ক্ষয় ও বহন কাজ করে।
নিম্ন গতিঃ- ক) নিম্নগতিতে নদীর একদম স্রোত হীন হয়ে যায়।
খ) নিম্নগতিতে কেবলমাত্র সঞ্চয় কাজ লক্ষণীয়।
১১. মধ্যগতি কি?
উত্তরঃ- পাহাড় পর্বত যেখানে সমভূমির সাথে মিলিত হয় সেখানে নদীর মৃদু ঢালের প্রবাহ লক্ষ্য করা যায় নদীর মধ্যগতি বলে । এই মধ্য গতিতে নদীর নিম্নক্ষয় আপেক্ষা পার্শ্বক্ষয় বেশি হয় ।
১২. V আকৃতির উপত্যকা কাকে বলে ?
উত্তরঃ- পার্বত্য প্রবাহে নদী প্রখর শক্তির দ্বারা নিম্নক্ষয় করে এর ফলে উপত্যকা ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। প্রস্তরখন্ডের সাথে নদী শিলাস্তরকে দ্রুত ক্ষয় করতে থাকে। অধিক নিম্নক্ষয় ও স্বল্প পার্শ্ব ক্ষয়ের দরুন নদী উপত্যকা ইংরেজি V অক্ষরের মতো দেখতে হয়। একেই V আকৃতির উপত্যকা বলে।
১৩. গিরিখাত কাকে বলে?
উত্তরঃ- নদীর স্রোতের সাথে বয়ে আসা শিলাখণ্ড , নুড়ি , পাথর ইত্যাদি বয়ে আসে। এই বই আসার আঘাতে নদী প্রবল নিম্ন ক্ষয় করে। এই নিম্ন ক্ষয়ের কারণে নদী উপত্যকা গভীর ও সংকীর্ণ হয়ে ইংরেজি V অক্ষর আকৃতি ন্যায় আকৃতি ধারণ করে। একেই গিরিখাত বলে।
১৪. ক্যানিয়ন কাকে বলে?
উত্তরঃ- বৃষ্টিপাত শুষ্ক মরু প্রায় উচ্চভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত এর অভাবজনিত কারণে এবং নদীর জলের জন্য নদীর দুই পাড়ে ক্ষয় প্রায় বন্ধ থাকে। সেই সময় নদীর ক্ষয় বেশি করে। এই নিম্ন ক্ষয়ের জন্য নদী গভীর ও সংকীর্ণ হয়ে ইংরেজি ‘ I’ অক্ষরের নাই হয়। এরূপ অবস্থাকে ক্যানিয়ন বলে।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন হল পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্যানিয়ন ।
১৫. জলপ্রপাত কাকে বলে?
উত্তরঃ- পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রবাহপথ নদীর ধারের হঠাৎ পরিবর্তনজনিত কারণে নদী খাড়া ঢালের উপর দিয়ে বেরিয়ে সোজা নিচের দিকে নামতে থাকে একে জলপ্রপাত বলে। পৃথিবীতে এইরকম মোট তিনটি জলপ্রপাত রয়েছে। অ্যাঞ্জেল হল পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত ।
১৬. মন্থকূপ কি?
উত্তরঃ- নদীর উচ্চ গতিতে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় অবস্থান স্থলে কঠিন শিলাখণ্ডের আঘাতে নদী খাতে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। সেই গর্তগুলিতে নদীর জল আটকে গিয়ে ঘূর্ণি সৃষ্টি করে জলের সাথে মিশে থাকা শিলাখণ্ডের ঘর্ষণের কারণে আগে তৈরি হওয়া বড় ছোট গর্ত গুলির আকার আরো বেড়ে যায়। এই রূপ গোলাকার গর্ত কে মন্থকূপ বা পটহোল বলে।
১৭. পলল শঙ্কুঃ- পলল শঙ্কু হলো এমন এক ভূমিরূপ যা পর্বতের পাদদেশে নদী দ্বারা বাহিত নুড়ি,পলি, বালি ইত্যাদি সমস্ত কিছু একস্থানে সঙ্কুর ন্যায় সঞ্চিত হয়ে ভূমিরূপ গড়ে তোলে তাই হল পলল শঙ্কু ।
১৮. নদী বাঁক বা মিয়েন্ডার কাকে বলে ?
উত্তরঃ- পার্বত্য প্রবাহে নদীর জলস্রোতের গতি ক্রমে হ্রাস পেয়ে যাই যার ফলে নদীর প্রবাহ পথে আসা বাধাগুলোকে নদী এড়িয়ে চলার জন্য বড় বড় বাঁক নিয়ে এঁকেবেঁকে চলে। প্রবাহপথ নদীর বড় বড় আঁকাবাঁকা বাক গুলিকে নদী বাঁক বা মিয়েন্ডার বলে ।
১৯. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কাকে বলে?
উত্তরঃ- বড় বড় আঁকাবাঁকা বাঁক গুলি দিয়ে নদী প্রবাহিত হওয়ার সময় যখন বড় বড় দুটি বাঁক এর মধ্যবর্তী অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় বাঁক দুটি জুড়ে যায় এবং নদী সোজা পথে ধাবিত হয়। তখন সে ক্ষয়প্রাপ্ত অংশটি নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হ্রাদের আকার ধারণ করে। হ্রাদটি দেখতে অনেকটা ঘোড়ার খুরের ন্যায় হয়, একেই অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে ।
২০. ব-দ্বীপ কাকে বলে ?
উত্তরঃ- কোন নদী যখন তার শেষ অবস্থায় এসে কোন হ্রাদ বা সাগরে মিলিতো হয়, তখন মোহনায় বালি , পলি, নুড়ি, কাদা ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে নদীবক্ষে প্রায় ত্রিকোণাকৃতির এবং বাংলা অক্ষর “ ব “ আকৃতির একটি ভূমিরূপ গড়ে তোলে একেই বদ্বীপ বলে ।যেমন গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ।
২১. হিমবাহ কাকে বলে?
উত্তরঃ- উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে মধ্যাকর্ষণ টানে ধীরগতিসম্পন্ন চলমান বরফের স্তুপকে হিমবাহ বলে।এককথায় হিমবাহ হল তুষার জমাট বেঁধে সৃষ্টি হওয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল। যা একসময় চলন্ত অবস্থায় ছিল।
২২. হিমশৈল কাকে বলে?
উত্তরঃ- হিমশৈল কথাটি এসেছে ‘ice’ শব্দের অর্থ তুষার বা হিম ও ‘beng’শব্দের অর্থ হল ‘পাহাড়’ থেকে। সমুদ্রের জলে ভাসমান বৃহদায়তন বরফের চাঙর হিমশৈল বলে। এই হিমশৈলের দ্বারা সমুদ্র স্রোতের গতি প্রবাহিত হয় ।
২৩. হিমানী সম্প্রপাত কাকে বলে?
উত্তরঃ- উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে বরফের চাঁই পার্বত্য ঢালে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ভাঙতে ভাঙতে প্রবল বেগে সশব্দে নিচের দিকে ধেয়ে আসে । যার ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় এবং মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক ক্ষতি হয়। একে হিমানী সম্প্রপাত বলে ।
২৪. হিমরেখা কাকে বলে?
উত্তরঃ- ভূপৃষ্ঠের উপর যে কাল্পনিক সীমারেখার উপর প্রায় সারা বছর বরফ জমে থাকে এবং সেই কাল্পনিক রেখা নিচে নামলেই বরফ গলে তরলে পরিণত হয় অর্থাৎ স্থায়ী বরফ দ্বারা আবৃত অঞ্চলের প্রান্ত সীমানাকে হিমরেখা বলে ।
২৫. সার্ক কাকে বলে?
উত্তরঃ- হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে হিমবাহ যখন উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে নিচের দিকে নেমে আসে তখন হিমবাহের প্রবাহ পথে অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ার দরুন পাহাড়ের খাঁজে অর্ধ গোলাকৃতি গহ্বর বা হাতলযুক্ত ডেক চেয়ারের মত ভূমিরূপ দেখতে পাওয়া যায় তাকে সার্ক বলে। পৃথিবীর গভীরতম সার্ক আন্টার্কটিকার ওয়ালকটে অবস্থিত।
২৬. পিরামিড চূড়া বা হর্ন কাকে বলে?
উত্তরঃ- হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট হওয়া ভূমিরূপ এর মধ্যে পিরামিড চূড়া হলো অন্যতম। হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্টি হওয়া তিন-চারটি সার্ক যখন পাশাপাশি একসাথে অবস্থান করে তখন তার মাঝে অবস্থিত খারাপ পর্বতের চূড়া থেকে দেখতে অনেকটা পিরামিডের ন্যায় দেখায়। এই পিরামিডের মতো আকৃতি বিশিষ্ট ভূমিরূপকে পিরামিড চূড়া বলে।
২৭. ঝুলন্ত উপত্যকা কাকে বলে?
হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে যখন ছোট ছোট উপ হিমবাহ গুলি প্রধান হিমবাহের সাথে মিলিত হয় এবং প্রধান হিমবাহ উপত্যকার তুলনায় তুলনামূলক বেশি বড় ও গভীর হয়ে থাকে যার দরুন ছোট ছোট উপ হিমবাহ গুলি প্রধান হিমবাহের উপর ঝুলন্ত অবস্থায় অবস্থান করে। এই রূপ ভূমি রূপকে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে। রোটাং গিরিপথ এর নিকট ঝুলন্ত উপত্যকা দেখতে পাওয়া যায়।
২৮. U আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোনী কি?
উত্তরঃ- উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ উপত্যকা বরাবর অগ্রসর হওয়ার সময় হিমবাহ ক্রমাগত তার পার্শ্ব ও নিম্ন ক্ষয় চালিয়ে যায় যার দরুন সেই উপত্যকাটি ইংরেজি ‘U’ আকৃতির ন্যায় দেখতে হয়। এই ভূমিরূপ কে ‘U’ আকৃতির উপত্যকা বলে।
২৯. রসে মোতানে কাকে বলে?
উত্তরঃ- রসে মোতানে শব্দটি একটি ফারসি শব্দ। যার অর্থ হলো উঁচু ঢিবি। হিমবাহ ক্ষয় কার্যের ফলে উপত্যাকার মাঝে অবস্থিত উঁচু ঢিবির মতো কঠিন শিলাখণ্ডের উপর দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় তার একদিক মসৃণ ও মৃদু ঢাল যুক্ত এবং তার বিপরীত দিক অমসৃণ অপ্রতিসম ভূমিরূপ গঠন করে একেই রসে মোতানে বলে।
৩০. ফিয়র্ড কি ?
উত্তরঃ- হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ এর মধ্যে অন্যতম হলো ফিয়র্ড। সমুদ্রের তলদেশ আংশিক জলমগ্ন নিমজ্জিত হিমবাহ উপত্যকা কে ফিয়র্ড বলে। এই ফিয়র্ড সাধারণত ‘U’ আকৃতির হয়। নরওয়ের সোজনে হল পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড এর উদাহরণ।
৩১. গ্রাবরেখা বা মোরেন কাকে বলে?
উত্তরঃ- হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে হিমবাহের চলমান অবস্থায় তার সাথে পাথর খন্ড, কাকর, নুড়ি, বালি ইত্যাদি প্রবাহ পথের আশেপাশে ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয়। এই সমস্ত পদার্থের সঞ্চয়কে গ্রাবরেখা বা মোরেন বলে।
৩২. ড্রামলিন কি?
উত্তরঃ- ড্রামলিন কথাটির অর্থ হল ঢিবি। হিমবাহের সাথে বয়ে আসা পাথর খন্ড, নুড়ি, কাকর, বালি, কাদা, ইত্যাদি সমস্ত কিছু একসাথে এসে সঞ্চিত হয়ে ঢিলা বা ছোট ছোট স্তূপের মত উল্টানো নৌকা বা উল্টানো চামচের মতো যে ভূমিরূপ গঠন করে তাকে ড্রামলিন বলে। আয়ারল্যান্ডে এরূপ বহু ড্রামলিন দেখতে পাওয়া যায়।
৩৩. কেটল কি?
উত্তরঃ- বহি ধৌত সমভূমিতে সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো কেটল। বহিঃবিধৌত সমভূমি তে হিমবাহের পশ্চাদপসরণ এর দরুন বালি, নুড়ি, পাথর, ইত্যাদি এর সঙ্গে বরফ খন্ড ও চাপা পড়ে যায়। সেই বরফখণ্ড উচ্চতা গলে সেখানে গর্ত সৃষ্টি করে এবং তা ক্রমে হ্রদে পরিণত হয়। এই গর্ত গুলোকে কেটল বলে এবং গর্ত থেকে ক্রমে পরিণত হওয়া হ্রদ গুলিকে কেটল হ্রদ বলে।
৩৪. গৌর কাকে বলে?
উত্তরঃ- মরুভূমিতে বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নিচের কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয়ের কারণে এবং উপরের শিলা কঠিন হওয়ার কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত না হওয়ায় নিচের অংশ সরু এবং উপরের অংশ ব্যাঙের ছাতার ন্যায় যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে গৌর বলে। সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে অনেক গৌর দেখতে পাওয়া যায়
৩৫. ইনসেলবার্জ কাকে বলে?
উত্তরঃ- ইনসেলবার্জ একটি জার্মান শব্দ যার অর্থ হল ‘দ্বীপশিলা’। মরুভূমি অঞ্চলে বায়ু প্রবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে কঠিন শিলায় গঠিত অনুচ্চ পাহাড়ের টিলার আকারে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এই বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা টিলাকে ইনসেলবার্জ বলে।
৩৬. ধ্রিয়ান কাকে বলে? বালিয়াড়ি কে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তরঃ- রাজস্থানের থর মরুভূমি অঞ্চলের চলমান বালিয়াড়ি ধ্রিয়ান নামে পরিচিত।
বায়ু প্রবাহের দিক অনুযায়ী বালিয়াড়ি কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা – ক) তির্যক বালিয়াড়ি।
খ) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি ।
৩৭. পেডিমেন্ট কাকে বলে ?
উত্তরঃ- ‘পেডি’ কথার অর্থ হল ‘পাদদেশ’ এবং ‘মেন্ট’ কথার অর্থ হল ‘পর্বত’। অর্থাৎ এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে পেডিমেন্ট কথাটি এসেছে। পেডিমেন্ট বলতে সাধারণত পর্বতের পাদদেশে থাকা ঢালু অংশকে বোঝায় ।
৩৮. বাজাদা কাকে বলে?
উত্তরঃ- ‘বাজাদা’ শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ ‘BAHADA’ থেকে যার অর্থ হল ‘পলোল শঙ্কু যুক্ত সমতল ভূমি’। সাধারণত মরু অঞ্চলে বায়ু প্রবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে পেডিমেন্ট এর সামনে মৃদু ঢালে জলধারার সঞ্চয় কাজের ফলে সমতলভূমি গড়ে ওঠে তাকে বাজাদা বলে ।
৩৯. পেডিমেন্ট ও বাজাদা একটি করে বৈশিষ্ট্য লেখ ।
উত্তরঃ- পেডিমেন্টঃ- পেডিমেন্ট হল অববাহিকার পুঞ্জিতক্ষয় জলধারা ইত্যাদি বায়ুর মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট একটি ভূমিরূপ ।
বাজাদাঃ- বাজাদা হলো জলধরার সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট একটি ভূমিরূপ ।