এই নিবন্ধে আমরা সপ্তম শ্রেণির বিশ অধ্যায় “চিরদিনের (সুকান্ত ভট্টাচার্য)” কবিতার প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানবো। Class 07 Bangla Chapter 20 Question Answer
Class 7 Bangla Chapter 20 Question Answer সপ্তম শ্রেনীর বাংলা অধ্যায় ২০ “চিরদিনের (সুকান্ত ভট্টাচার্য)” প্রশ্ন উত্তর
Table of Contents
১. নীচের শব্দগুলির অন্তত দুটি অর্থ লেখো এবং দুটি পার্থক্য বাক্যে প্রয়োগ করো :
কাঁটা,তাল,জোড়া,সারি,মজা,পাশ
উত্তরঃ
কাঁটা :
- গাছের কাঁটা → শিমুল গাছে অনেক কাঁটা থাকে ।
- পুলক/রোমাঞ → প্রথমবার ভূতের গল্প শুনে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিলো।
তাল :
- গাছবিশেষ → তালগাছ অনেক লম্বা হয় ।
- যুগল/দুটি → আমি একজোড়া চুড়ি কিনেছি।
- দলা বা পিণ্ড → একতাল কাদা শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় মূর্তি হয়ে ওঠে।
জোড়া :
- যুক্ত/আঠা → আঠা ভালো হলে কাঠের সঙ্গে কাচও জোড়া লাগে।
সারি :
- শ্রেণি/পক্তি → সারি সারি খেজুর গাছ লাগানো আছে।
- মাঝি মাল্লাদের গান বিশেষ → আজও বাংলার বহু গ্রামে সারি গান শোনা যায়।
মজা :
- আনন্দ → ঈদের সময় মজা করার জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি।
- বদ্ধ → মজা পুকুরের জলে স্নান করা উচিত নয়।
পাশ :
- নৈকট্য → স্বার্থপর লোকেরা বিপদের দিনে বন্ধুদের পাশ কাটিয়ে যায়।
- সাফল্য → উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বাবা আমাকে একটা ল্যাপটপ উপহার দিয়েছিল।
২. নীচের শব্দযুগলের অর্থ পার্থক্য নির্দেশ করে দুটি আলাদা বাক্য তৈরি করো :
কাঁটা, পার, জড়ো, সব, দীপ,
কাটা, পাড়, জড়, শব, দ্বীপ
উত্তরঃ
- কাঁটা (কণ্টক) → চুলের কাঁটা মহিলাদের অলংকার বিশেষ ।
- কাটা (ছেদন করা) → গাছ কাটার ফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
- পার (কিনারা) → নদীর পারে একগুচ্ছ বক বসে আছে।
- পাড় (বস্ত্রের প্রান্ত) → পাড়ওয়ালা ধুতি পরতে শৌখিন লোকেরা পছন্দ করে।
- জড়ো (জমায়েত) → অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে ঝামেলা দেখার জন্য।
- জড় (প্রাণহীন) → জীব ও জড়ের বৈচিত্র্যে প্রকৃতি অপরিসীম সুন্দর।
- সব (সমস্ত) → ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে।’
- শব (মৃতদেহ) → শব দেহদের শেষকৃত্য করা হবে।
- দীপ (বাতি) → সন্ধ্যা বেলায় দীপ জ্বালা গ্রামবাংলার রেওয়াজ ।
- দ্বীপ (প্রাকৃতিক জলবেষ্টিত স্থান) → আমরা পরের মাসে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বেড়াতে যাব।
৩. ঠিক বানানটি বেছে নাও :
ব্যাস্ত/ব্যস্ত, সান্ধ্য/সান্ধ, দূর্ভিক্ষ / দুর্ভিক্ষ, বধু / বধূ, ধ্বনি / ধনি, সুবর্ন / সুবর্ণা
উত্তরঃ
- ব্যাস্ত/ব্যস্ত ✓,
- ✓ সান্ধ্য/সান্ধ,
- দূর্ভিক্ষ / দুর্ভিক্ষ ✓,
- বধু / বধূ ✓,
- ✓ ধ্বনি / ধনি,
- সুবর্ন / সুবর্ণা ✓
৪. নীচের শব্দগুলির কোনটি বিশেষ্য এবং কোনটি বিশেষণ বাছাই করে আলাদা দুটি স্তম্ভে সাজাও। এরপর বিশেষ্যগুলির বিশেষণের রূপ এবং বিশেষণগুলির বিশেষ্যের রূপ লেখো।
(লাজুক, ব্যস্ত, মাঠ, সন্ধ্যা, গ্রাম, ঘর, ঘোষিত, চাষি)
উত্তরঃ
বিশেষ্য | বিশেষণ |
মাঠ | মেঠো। |
সন্ধ্যা | সান্ধ্য। |
গ্রাম | গ্রাম্য। |
চাষি | চাষযোগ্য। |
ঘর | ঘরোয়া। |
ফসল | ফসলি। |
বিশেষণ | বিশেষ্য |
লাজুক | লাজ। |
ব্যস্ত | ব্যস্ততা। |
ঘোষিত | ঘোষণা। |
জলীয় | জল। |
৫. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :
মুখর, অহংকারী, অন্ধকার, একটানা, বিচিত্র
উত্তরঃ
- মুখর → মৌন।
- অহংকারী → অহংকারহীন।
- অন্ধকার → আলো।
- একটানা → বিশ্রাম।
- বিচিত্র → সরল।
৬. ঘড়ির কাঁটা’— এখানে ‘ঘড়ি’ আর ‘কাঁটা’, এই দুটি শব্দের মধ্যে সম্বন্ধ তৈরি করেছে ‘র’ বিভক্তিটি, ‘ঘড়ির কাঁটা’কে তাই আমরা বলব সম্বন্ধ পদ। এই কবিতায় এই রকম আরো ক’টি উদাহরণ খুঁজে পাচ্ছ লেখো।একটি করে দেওয়া হল—তালের সারি।
উত্তরঃ ঘড়ির কাঁটা, দুর্ভিক্ষের আঁচল, দাওয়ার অন্ধকার, পাখির গান, ক্ষেতের (খেতের) চাষি।
৭. সন্ধিবিচ্ছেদ করো :
বৃষ্টি, স্বাগত, অহংকার, পরস্পর, দুর্ভিক্ষ
উত্তরঃ
- বৃষ্টি → বৃষ্ + তি,
- স্বাগত → সু + আগত,
- অহংকার → অহম্ + কার,
- পরস্পর → পরঃ + পর,
- দুর্ভিক্ষ → দুঃ + ভিক্ষ।
৮. পদগুলির কারক-বিভক্তি নির্ণয় করো :
৮.১. রাত্রি এখানে স্বাগত সান্ধ্য শাঁখে।
উত্তরঃ করণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
৮.২. এখানে সকাল ঘোষিত পাখির গান ।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৮.৩. এ গ্রামের পাশে মজা নদী বারো মাস।
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৮.৪. ঠাকুমা গল্প শোনায় যে নাতনিকে ।
উত্তরঃ কর্মকারকে ‘কে’ বিভক্তি।
৮.৫. কৃষক-বধূরা ঢেঁকিকে নাচায় পায়ে ।
উত্তরঃ কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
৯. বাক্য বাড়াও :
৯.১. চলে গেল লোক। (কখন ? কেন ? কোথায় ?)
উত্তরঃ
- (কখন ?) → চলে গেল লোক সকালে।
- (কেন ?) → চলে গেল লোক আকালেতে।
- (কোথায় ?) → চলে গেল লোক দিকে দিকে ভ্রমে।
৯.২. আজ বিদ্ৰোহ বুঝি করে। (কে? কখন ?)
উত্তরঃ
- (কে ?) → মজা নদী আজ বিদ্রোহ বুঝি করে।
- (কখন ?) → বর্ষায় আজ বিদ্রোহ বুঝি করে।
৯.৩. ঘোমটা তুলে দেখে নেয় কোনোমতে। (কে? কী ? কোথায় ?)
উত্তরঃ
- (কে ?) → কৃষক বধূ ঘোমটা তুলে দেখে নেয় কোনোমতে।
- (কী ?) → ঘোমটা তুলে দেখে নেয় কোনোমতে, সুবর্ণ যুগ আসে।
- (কোথায় ?) → ঘোমটা তুলে দেখে নেয় কোনোমতে, সবুজ ফসলে।
৯.৪. এ গ্রাম সবুজ ঘাঘরা পরে। (কেমন ? কীসের ?)
উত্তরঃ
- (কেমন ?) → এ গ্রাম নতুন সবুজ ঘাঘরা পরে।
- (কীসের ?) → সবুজ ঘাসের এ গ্রাম সবুজ ঘাঘরা পরে।
৯.৫. দীপ জ্বলে। (কোথায় ? কখন ?)
উত্তরঃ
- (কোথায় ?) → গ্রামে দীপ জ্বলে।
- (কখন ?) → প্রতি সন্ধ্যায় দীপ জ্বলে।
১০. একটি বাক্যে উত্তর দাও :
১০.১. ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা কোথায় গিয়ে থেমে গেছে ?
উত্তরঃ ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা বৃষ্টিমুখর লাজুক গাঁয়ে গিয়ে থেমে গেছে।
১০.২. তালের সারি কোথায় রয়েছে ?
উত্তরঃ জোড়া দিঘির পাড়েতে তালের সারি রয়েছে।
১০.৩. কিষাণপাড়া নীরব কেন ?
উত্তরঃ কিষাণপাড়ার নীরবতার কারণ পচা জল আর মশার অহংকার।
১০.৪. বর্ষায় কে বিদ্রোহ করে ?
উত্তরঃ গ্রামের পাশের মজা নদী বর্ষায় বিদ্রোহ করে।
১০.৫. কে গোয়ালে ইশারা পাঠায় ?
উত্তরঃ সবুজ ঘাস গোয়ালে ইশারা পাঠায়।
১০.৬. রাত্রিকে কীভাবে স্বাগত জানানো হয় ?
উত্তরঃ সান্ধ্য শাঁখে রাত্রিকে স্বাগত জানানো হয় ৷
১০.৭. কোথায় জনমত গড়ে ওঠে ?
উত্তরঃ বুড়ো বটতলায় জনমত গড়ে ওঠে।
১০.৮. ঠাকুমা কাকে, কখন গল্প শোনান ?
উত্তরঃ ঠাকুমা নাতনিকে, রাত্রি হলেই গল্প শোনান।
১০.৯. কোন্ গল্প তিনি বলেন ?
উত্তরঃ গতবারের আকালে দিশাহারা লোকের দিকে দিকে চলে যাবার গল্প তিনি শোনান।
১০.১০. সকালের আগমন কীভাবে ঘোষিত হয় ?
উত্তরঃ পাখির ডাকে সকালের আগমন ঘোষিত হয়।
১০.১১. কবিতায় কোন্ কোন্ জীবিকার মানুষের কথা আছে ?
উত্তরঃ কবিতায় কৃষক, কামার, কুমোর, তাঁতি প্রভৃতি জীবিকার মানুষের কথা আছে।
১১. আট দশটি বাক্যে উত্তর দাও :
১১.১. এই কবিতায় বাংলার পল্লি প্রকৃতির যে বর্ণনা আছে তা নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা ‘চিরদিনের’ কবিতায় বাংলার পল্লি প্রকৃতির নিপুণ চিত্র বর্ণিত হয়েছে। পল্লিপ্রকৃতির আপাত সুন্দর রূপেই কবি সীমাবদ্ধ থাকেননি, তার অসুন্দর, তার লড়াইয়ের ছবিও কবি তুলে ধরেছেন। সেখানে শহুরে ব্যস্ততা নেই, বৃষ্টিমুখর লাজুক তার রূপ। পাকা রাস্তা না থাকলেও সবুজ মাঠের বুকে পায়ে পায়ে তৈরি হয় পথ। জোড়া দিঘির পাড়ে তালের সারি, দূরে বাঁশঝাড় পল্লিপ্রকৃতিকে মোহময় করে তোলে। বর্ষার আগমনে পল্লিপ্রকৃতিতে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়, মজা নদী নতুন করে ফুলে ফেঁপে ওঠে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ নতুনের বার্তা বয়ে আনে। এই পল্লিপ্রকৃতিতে পচা জল, মশার উৎপাত, আকাল দুর্ভিক্ষও আছে কিন্তু তা পল্লিজীবনের স্পন্দনকে স্তব্ধ করতে পারে না। সবুজ ফসলে পল্লিবাংলার মানুষ তাই সোনা যুগের আহ্বান শুনতে পায় ৷
১১.২. কবিতাটিতে গ্রামীণ মানুষের জীবনযাপনের যে ছবিটি পাও তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তরঃ কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা ‘চিরদিনের’কবিতাটিতে পল্লি বাংলার চিরায়ত পরিবেশে সাধারণ শ্রমজীবী কৃষিজীবী মানুষের জীবনযাপনের ছবিও নিপুণ ভাবে আঁকা হয়েছে। পল্লি-বাংলার মানুষের জীবন যেন নিজস্ব সুর ও ছন্দে বয়ে চলে। পাখির কলকাকলিতে তাদের দিন শুরু হয়। সারাদিন কৃষকেরা খেতে সোনার ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে। কামার, কুমোর, তাঁতি প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজ ধারাবাহিক ভাবে করে যান। গ্রামের বধূরাও একদিকে পায়ে পায়ে ঢেঁকি নাচান, তারপর শাঁখের শব্দে, দীপের আলোয় রাত্রিকে স্বাগত জানান। সন্ধ্যাবেলায় বুড়ো বটতলায় জড়ো হন গ্রামের মানুষ, সেখানেই গড়ে ওঠে জনমত। আকাল, দুর্ভিক্ষ তাদের বারবার বিপর্যস্ত করলেও সোনার ফসলের স্বপ্ন তাদের প্রাণ স্পন্দন কেড়ে নিতে পারে না ।
১১.৩. আকাল ও দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে মানুষের সম্মিলিত শ্রম আর জীবনীশক্তি কীভাবে বিজয়ী হয়েছে, কবিতাটি অবলম্বনে তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ গ্রামবাংলার মানুষের বুকে আজও অনুরণিত হয় পঞ্চাশের মন্বন্তরের হাহাকার। সেই পটভূমি উঠে এসেছে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘চিরদিনের’ কবিতাটিতে। কিন্তু সাম্যবাদী কবি হাহাকারেই কবিতা শেষ করেননি, মানুষের সম্মিলিত শ্রম আর জীবনীশক্তিকে অবলম্বন করে মুক্তিপথের অনুসন্ধান করেছেন। তাইতো চরম বিপর্যয়ের পরও কিষান লাঙল হাতে মাঠে নামে। কাজে যায় কামার, কুমোর, তাঁতি। আর তাদের সম্মিলিত উদ্যোগেই পল্লি-বাংলা নতুন প্রাণ ফিরে পায়।
১১.৪. “কোনো বিশেষ সময়ের নয়, বরং আবহমান কালের বাংলাদেশ তার প্রকৃতি ও মানুষকে নিয়ে জীবনের যে জয়গান গেয়ে চলেছে, এই কবিতায় তারই প্রকাশ দেখতে পাই।”—উপরের উদ্ধৃতিটির সাপেক্ষে কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা ‘চিরদিনের’ কবিতাটির ছত্রে ছত্রে চিরন্তন গ্রাম বাংলার আবহমান রূপ ধরা পড়েছে। পল্লিপ্রকৃতির সুন্দর-অসুন্দরের বিন্যাসে কৃষক-শ্রমজীবী মানুষের জীবনের চিরাচরিত ছবি। দুর্ভিক্ষ-আকালের মতো বিপর্যয়ও সেখানে কড়া নাড়ে কিন্তু গ্রাম বাংলার মানুষের অফুরন্ত জীবনীশক্তি তাকে পরাস্ত করে নতুন জীবনের গান বয়ে আনে। আর সেই ইতিহাস বিধৃত থাকে ঠাকুমা-দিদিমার গল্পে যা বংশ পরম্পরায় ধাবিত হয়। আর সে কারণেই কবিতাটির নামকরণ সার্থক।
১২. ব্যাখ্যা করো :
১২.১. “এখানে বৃষ্টিমুখর ….. ঘড়ির কাঁটা”।
উত্তরঃ পল্লিবাংলায় শহুরে ব্যস্ততা নেই। কাজের জন্য মানুষকে এখানে যন্ত্রের মতো ছুটতে হয় না। ঋতুচক্রের সাবলীল পরিক্রমণে পল্লিসুন্দর, আর তাই সে উদ্ধত নয় লাজুক।
১২.২. “এ গ্রামের পাশে….. বিদ্রোহ বুঝি করে”।
উত্তরঃ গ্রামের পাশে ছোট্ট নদী, এ বাংলার অতিপরিচিত চিত্র। বর্ষার জলে পুষ্ট নদীগুলি অন্য সময় মজে থাকলেও বর্ষাকালে তারা প্রবল আকার ধারণ করে, দেখে মনে হয় তারা যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।
১২.৩. “দুর্ভিক্ষের আঁচল….কাজ করে”।
উত্তরঃ খরা, বন্যা, মহামারি গ্রামে লেগেই থাকে। এই সব ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বারবার গ্রামবাংলাকে বিপর্যস্ত করে। এখানে পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিতে গ্রামের মানুষ যে প্রবল জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল তার কথা এসেছে।
১২.৪. “সারাটা দুপুর……বিচিত্র ধ্বনি ওঠে”।
উত্তরঃ গ্রামের চাষিরা সকালে কাজে যান সারা দুপুর তারা খেতে কাজ করেন। তারা যখন একটানা কাজ করেন তখন কাজের সময় তৈরি হওয়া নানান চেনা-বিচিত্র শব্দ তাদের কানে বাজতে থাকে।
১২.৫. “সবুজ ফসলের সুবর্ণযুগ আসে”।
উত্তরঃ সাম্যবাদী কবি সোনার ফসলের স্বপ্ন বুনে কবিতাটি শেষ করতে চেয়েছেন। আজও গ্রাম বাংলার জীবন যেহেতু কৃষির ওপর নির্ভরশীল তাই চাষবাসকে ঘিরেই গড়ে ওঠে তাদের জীবন সংগ্রাম। আর সোনার ফসলের আগমনে সে সংগ্রামে আসে জয়।
১৩. তোমার দেখা একটি গ্রামের কথা ডায়েরিতে লেখো। গ্রামটি কোথায়, সেখানে কোন্ কোন্ জীবিকার কতজন মানুষ থাকেন ইত্যাদি জানিয়ে গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মানুষজনের জীবনযাপন পদ্ধতি, বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা লেখো। গ্রামটির উন্নতিসাধনে যদি কোনো পরামর্শ দেওয়ার থাকে, অবশ্যই সেকথা লিখবে।
উত্তরঃ উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত একটি গ্রাম নয়নপুর। সেখানে ১২২ জন চাষি, ৯০ জন কুমোর, ৯৩ জন ছুতোর, ৪২ জন তাঁতি এবং ৩০ জন কামার থাকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। শীতকালে গ্রামের মাঠ সরষে ফুলে ভরে থাকে। মাঠের পাশে আছে তালগাছের সারি যুক্ত পুকুর। পুকুরে নারকেল কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা ঘাট। বেশ কিছুটা দূরে দূরে অবস্থিত খড়ের চাল যুক্ত মাটির বাড়ি। কিছু টালি ও টিনের চালসহ পাকাবাড়িও রয়েছে।
সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা অত্যন্ত সাদামাটা। ভোর হবার আগে গৃহস্থ বাড়ির মেয়ে-বউরা উঠে পড়ে। তারা তাদের স্বামীরা মাঠে যাবার আগে যাতে কিছু খেয়ে যেতে পারে তার প্রস্তুতি নেয়। বাড়ির পুরুষেরা ভোরবেলায় উঠে মাঠে অথবা যার যার কাজে বেড়িয়ে যায়। একটু বেলা বাড়লেই কামারশালা থেকে হাতুড়ি পেটার আওয়াজ শোনা যায়। তাঁতির বাড়ি থেকে তাঁতের খটাখট শব্দ ভেসে আসে। তারপর বেলায় বাড়ির বউরা ছেলেমেয়েকে ইস্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের স্বামীদের জন্য ভাত নিয়ে মাঠে যায়। সন্ধেবেলা ঘরে ঘরে শাঁখের আওয়াজ শোনা যায়।