Class 10

Class 10 Life Science Chapter 01 Question Answer | মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় 01 প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় – হরমোন

Class-10-Life-Science-Chapter-01-Question-Answer

Class 10 Life Science Chapter 01 Question Answer | মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় 01 এর প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় – হরমোন – এর দীর্ঘউত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

এই নিবন্ধে আমরা মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় 01 এর প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সম্বন্ধয়-হরমোন-এর দীর্ঘউত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরের 15 টি প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবো।

Class 10 Life Science Chapter 01 Question Answer 5 Marks | মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় 01 প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় – হরমোন – এর দীর্ঘউত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

1. মানবদেহে অ্যান্ড্রোজেন বা টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা লেখো।
উত্তরঃ
– মানবদেহে এন্ড্রোজেনের ভূমিকা: মানবদেহে এন্ড্রোজেন বা টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা গুলি হল

i) মুখ্য ও গৌণ যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন: এই হরমোন পুরুষের দেহে শুক্রাশয়(মুখ্য জনন অঙ্গ) এবং শু্ক্রথলি,শিশ্ন প্রভৃতির বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে এবং তাদের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখে।
ii) গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ: টেস্টোস্টেরন পুরুষ দেহে গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের যেমন – ভারী কণ্ঠস্বর, দাড়ি গোঁফ গজানো, পেশিবহুল দেহ প্রভৃতির বিকাশে সাহায্য করে।
iii) শুক্রাণু উৎপাদন: বয়সন্ধিকালে ও তার পরবর্তী সময়ে শুক্রাণু উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
iv) BMR নিয়ন্ত্রণ: টেস্টোস্টেরন BMR বৃদ্ধি করে।
v) অন্যান্য কাজ: টেস্টোস্টেরন RBC-র উৎপাদন বাড়ায়, প্রোটিন সংশ্লেষ, পেশি ও অস্থির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

2. ক্রিটিনিজম কি? এই রোগের দুটি লক্ষণ লেখো। ডায়াবেটিস ইনসিপিডসের লক্ষণ লেখো।
উত্তরঃ
– ক্রিটিনিজম: থাইরক্সিন হরমোন-এর কম ক্ষরণে শিশুদের যে রোগ হয় তাকে ক্রেটিনিজম বলে।
রোগের লক্ষণ: i) ক্রিটিনিজম রোগে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে খর্বাকৃিত হয় এবং উদর বড়ো হয়।
ii) মানসিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তা ব্যাহত হয় ও BMR কমে যায়।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডসের লক্ষণ: নেফ্রনের দূরবর্তী সংবর্তনালিকা ও সংগ্রাহী নালিকা অংশে জলের পুনঃশোষণ ব্যাহত হয়। ফলে মূত্রে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও বার বার লঘু মূত্র রেচিত হয়।

3. গ্রেভস বর্ণিত রোগ কি? এ রোগের লক্ষণগুলি লেখো। থাইরক্সিন ও অ্যাড্রিনালিনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তরঃ
– গ্রেভস বর্ণিত রোগ: পরিণত বয়সে থাইরক্সিন এর অধিক ক্ষরণে যে রোগ হয় তাকে গ্রেভস বর্ণিত রোগ বলে।
রোগের লক্ষণ : i) অক্ষিগোলক ঠেলে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে।
ii) BMR বেড়ে যায় ও দেহের ওজন কমে।
iii) থাইরয়েড বড় হয় ও ফুলে ওঠে।
iv) রক্তের শর্করা আয়োডিন ও T4 – এর পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়।
থাইরক্সিন ও অ্যাড্রিনালিনের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়
i) উৎপত্তিস্থল
ii) নিয়ন্ত্রণ
iii) ক্রিয়া পদ্ধতি
iv) অন্য নাম
থাইরক্সিন
i) থাইরয়েড গ্রন্থি
ii) অগ্র পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত TSH দ্বারা এর ক্ষ্ররণ নিয়ন্ত্রিত
iii) এই হরমোনের ক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী
iv) এই হরমোন BMR বাড়ায়। তাই একে ক্যালরিজোনিক হরমোন বলে
অ্যাড্রিনালিন
i) অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডালা অংশ
ii) অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়
iii) এই হরমোনের ক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী নয়
iv) জরুরী কালীন অবস্থায় দেহকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সাহায্য করে বলে একে জরুরিকালীন হরমোন বলে।

4. মানবদেহের ডিম্বাশয় নিঃসৃত দুটি হরমোনের কাজ লেখ।
উত্তরঃ
– মানবদেহে ডিম্বাশয় থেকে ক্ষরিত দুটি হরমোন হলো প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন। তাদের ক্ষরণস্থল ও কাজ উল্লেখ করা হল –
প্রোজেস্টেরন
ক্ষরণস্থল: ডিম্বাশয়ের পীতগ্রিন্থ থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ: i) গর্ভাবস্থা বজায় রাখা: এই হরমোন স্ত্রীদেহের গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় স্তনের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে।
ii) ভ্রুনের রোপণ: নিষিক্ত ডিম্বানু তথা ভ্রুনকে জরায়ুগাত্রে প্রতিস্থাপিত করে।
iii) আমরা গঠন: আমরা গঠনে সাহায্য করে।
iv) রজঃচক্র স্থগিত রাখা: গর্ভাবস্থায় রজঃচক্র বন্ধ থাকে।
v) প্রসবে ভূমিকা: প্রসবকালে যোনিপথের প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইস্ট্রোজেন
ক্ষরণস্থল: ডিম্বাশয় এর পরিণত ডিম্বথলি বা গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ: i) মুখ্য ও গৌণ জননাঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন: ডিম্বাশয়, ডিম্বনালি, জরায়ু, যোনি, স্তনগ্রন্থি প্রভৃতির বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনের সাহায্য করে।
ii) গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ: ইস্ট্রোজেন মহিলাদের গৌণ যৌন লক্ষণ, যেমন – সরু কণ্ঠস্বর, মসৃণ ও স্বল্প লোমবিশিষ্ট ত্বক প্রভৃতি প্রকাশের সাহায্য করে।
iii) রাজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ: এই হরমোনের স্ত্রীদেহে স্বাভাবিক নিয়মিত রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
iv) স্নেহ পদার্থের সঞ্চয়: ত্বকের নিচে স্নেহপদার্থের সঞ্চয়ে সাহায্য করে।
v) অন্যান্য কাজ: গর্ভাবস্থায় স্তনের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, গর্ভাবস্থায় জরায়ুর বৃদ্ধি ঘটায়, ইস্ট্রোজেন অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ফসফেট ধরে রাখতে পারে যা অস্থি গঠনে কাজে লাগে।

5. প্রদত্ত কাজ গুলি কোন কোন হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে।
i) অস্থির ও তরুণাস্তির বৃদ্ধি
ii) BMR বৃদ্ধি
iii) রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানো
iv) ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণ উৎপাদন ও মাসিক রাজঃচক্র
v) শুক্রাণু উৎপাদন
উত্তরঃ– i) অস্থির ও তরুণাস্তির বৃদ্ধি – STH বা GH
ii) BMR বৃদ্ধি – থাইরক্সিন।
iii) রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানো – ইনসুলিন।
iv) ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণ উৎপাদন ও মাসিক রাজঃচক্র – ইস্ট্রোজেন।
v) শুক্রাণু উৎপাদন – টেস্টোস্টেরন।

6. মানবদেহে সর্ববৃহৎ অনাল গ্রন্থির নাম ও তার অবস্থান উল্লেখ করো। থাইরক্সেন এর কাজ লেখো।
উত্তরঃ
– মানুষের সর্ববৃহৎ অনাল গ্রন্থির নাম থাইরয়েড গ্রন্থি।
অবস্থান: মানুষের গ্রীবাদেশে ট্রাকিয়ার দু-পাশের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তরুণাস্থি বলয়ের পার্শ্বদেশে অবস্থিত।
থাইরক্সিনের কাজ: i) মৌল বিপাক হার বৃদ্ধি : থাইরক্সিন দেহের সামগ্রিক বিপাক নিয়ন্ত্রণ ও BMR বৃদ্ধি করে। তাই একে ক্যালরিজেনিক হরমোন বলে।
ii) হৃদপিন্ডের উপর ক্রিয়া: হৃদগতি ও হার্দ-উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
iii) বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন: থাইরক্সিন দেহের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনের সাহায্য করে। এই জন্য একে অ্যানাবলিক হরমোন বলে
iv) কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র:মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বিকাশ ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
v) শারীর বৃত্তীয় ক্রিয়া: ক্ষুদ্রান্তে গ্লুকোজ শোষণে, RBC-র পরিনতি প্রাপ্তিতে ও ফ্যাটের অপরিচিতমূলক বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।

7. অ্যাড্রিনালিনকে জরুরীকালীন হরমোন বলে কেন? মানবদেহে অ্যাড্রিনালিনের কাজ লেখো।
উত্তরঃ
– অ্যাড্রিনালিনকে জরুরীকালীন হরমোন বলার কারণ : রাগ, দুশ্চিন্তা, ভয়, আনন্দ প্রভৃতি মানসিক উত্তেজনার সময় রক্তে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায় এবং অ্যাড্রিনালিন স্নায়ুতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র, রক্ত সংবহন তন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে ও দেহকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে। এইজন্যে অ্যাড্রিনালিনকে জরুরীকালীন হরমোন বলে।
মানবদেহে অ্যাড্রিনালিনের কাজ: i) হৃদপিন্ডের ওপর প্রভাব : এই হরমোন হৃদগতি ও হার্দ-উৎপাদ বৃদ্ধি করে।
ii) রক্তবাহের ওপর প্রভাব: এটি রক্তবাহের সংকুচিত করে রক্তচাপ বাড়ায়।
iii) আপৎকালীন কাজ: ভয়, ক্রোধ, উত্তেজনা, আনন্দ প্রভৃতি সংকটজনক অবস্থায় দেহকে মোকাবেলা করার উপযোগী করে তোলে।
iv) দেহতাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: অ্যাড্রিনালিন BMR বৃদ্ধি করে ও দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
v) তারারন্ধ্রের প্রসারণ: তারারন্ধ্রের প্রসারণ ঘটায়।
vi) ত্বকের লোমকে খাড়া করা: ত্বকে লোমের মূলে থাকা ইরেকটাস পেশিকে সংকুচিত করে লোমকে খাড়া করে।

8. ইনসুলিন হরমোনের উৎস ও কাজ লেখো।
উত্তরঃ
– ইনসুলিনের উৎস: অগ্ন্যাশয় এর আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স এর বিটাকোশ থেকে ইনসুলিন ক্ষরিত হয়।
ইনসুলিনের কাজ: ইনসুলিন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের বিপাকে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
(a) কার্বোহাইড্রেট বিপাক:
(i) গ্লুকোজ শোষণ: ইনসুলিন কলাকোষে গ্লুকোজ বিশোষণ করে, অর্থাৎ কশে গ্লুকোজ গ্রহণের সাহায্য করে।
(ii) গ্লুকোজ দহন: ইনসুলিন কলাকোশে গ্লুকোজ দহনে সাহায্য করে, বিশেষ করে গ্লুকোজকে পাইরুভিক অ্যাসিডে পরিণত করতে সাহায্য করে।
(iii) গ্লাইকোজেনেসিস: ইনসুলিন যকৃত ও পেশিকোশে গ্লুকোজ কে গ্লাইকোজেনে পরিণত করে জমা রাখে।
(iv) রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখা বিশেষ করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা কমিয়ে স্বাভাবিক করা।
(b) প্রোটিন বিপাক: ইনসুলিন ভ্যালিন, লিউসিন, টাইরোসিন প্রভৃতি অ্যামাইনো অ্যাসিড পরিবহনে সাহায্য করে। প্রোটিনের ভাঙ্গন হ্রাস করে।
(c) ফ্যাট বিপাক: ইনসুলিন ফ্যাটের জারণে বাধা দিয়ে কিটোন বডি প্রস্তুত বন্ধ রাখে।

9. হাইপোথ্যালামাসে উৎপন্ন হরমোন গুলির নাম ও কাজ লেখো।
উত্তরঃ
– হাইপোথেলাম আছে মোট ছটি হরমোন উৎপন্ন হয়। সেগুলি হল –
(i) GH-RH [গ্রোথ হরমোন রিলিজিং হরমোন]: এটি অগ্র পিটুইটারি থেকে GH বা STH-এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
(ii) GnRH [গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন]: এটি অগ্র পিটুইটারি থেকে GTH-এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
(iii) PRH [প্রোল্যাকটিন রিলিজিং হরমোন]: অগ্র পিটুইটারি থেকে প্রোল্যাকটিন ক্ষরণে সাহায্য করে।
(iv) PIH [প্রোল্যাকটিন ইনহিবিটিং হরমোন বা ডোপামিন]: প্রোল্যাকটিন ক্ষরণে বাধা দেয়।
(v) ADH:হাইপোথ্যালামাস থেকে সংশ্লেষিত হয়ে পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে ক্ষরিত হয়। দূর সংবর্ধনালীতে জলের পুনঃশোষণনিয়ন্ত্রণ করে।
(vi) অক্সিটোসিন: হাইপোথ্যালামাসে উৎপন্ন হয়ে পশ্চাৎপিটুইটারিতে সঞ্চিত হয় ও সেখান থেকে ক্ষরিত হয়। এটি শিশুর জন্মগ্রহণের সময় জরায়ুর সংকোচনের সাহায্য করে।

10. ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? TSH ও থাইরক্সিন হরমোনের সাহায্যে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ
– ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ: কোন একটি হরমোনের ক্ষরণ অপর আর একটি গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে তাকে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে। এক্ষেত্রে নিঃসৃত হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে নিয়ন্ত্রক হরমোনের মাত্রা হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে। উদাহরণ: থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত থাইরক্সিন হরমোন ক্ষরণের মাত্রা হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত TRH(থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন) ও অগ্র পিটুইটারি নিঃসৃত TSH দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
TSH ও থাইরক্সিন হরমোনের সাহায্যে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ: কোন কারনে দেহে অতিরিক্ত পরিমাণ থাইরক্সিন ক্ষরিত হলে তা হাইপোথ্যালামাসকে ঋণাত্মক বার্তা পাঠায়। ফলে TRH ক্ষরণ হ্রাস পায়, যা আবার পিটুইটারতে TSH ক্ষরণ হ্রাস করে। TSH ক্ষরণ হ্রাস পেলে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ক্ষরণ কমে ও স্থিতাবস্তা ফিরে আসে। একে ঋনাত্মক ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে।
আবার যখন রক্তের থাইরক্সিন ক্ষরণ কমে যায় তখন হাইপোথ্যালামসের কাছে ঋণাত্মক বার্তা যায়। এর ফলে হাইপোথেলামাস থেকে TRH ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়, যা TSH ক্ষরণ বাড়িয়ে থাইরক্সিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। একে ধনাত্মক ফিডব্যাক বলে।

11. মানবদেহে বিভিন্ন অন্তক্ষরা গ্রন্থিগুলির নাম, অবস্থান ও ক্ষরিত হরমোনের নাম লেখো।
উত্তরঃ-

অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিঅবস্থানক্ষরিত হরমোন
পিটুইটারি গ্রন্থিতৃতীয় প্রকোষ্ঠের নীচে স্ফেনয়েড অস্থির সেলাটাসিকা গহ্বরে পিটুইটারি গ্রন্থটি অবস্থিত।STH বা GH, TSH, ACTH, FSH, LH, ICSH, LTH, ADH বা ভেসোপ্রোসিন।
থাইরয়েড গ্রন্থিগলার ভিতরে ল্যারিংসের ঠিক নীচে ট্রেকিয়ার উভয় পাশে একটি করে মোট দুটি খন্ডরূপে অবস্থান করে।ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন(T3), ক্যালসিটোনিন, থাইরক্সিন(T4)।
অ্যাড্রিনাল বা সুপ্রেরেনাল গ্রন্থিপ্রতিটি বৃক্ষের ওপর টুপির মতো একটি করে মোট দুটি অবস্থিত।অ্যাড্রিনাল কটেক্স: কর্টিকয়েড হরমোন।
অ্যাড্রিনাল মেডালা: অ্যাড্রিনালিন ও নর-অ্যাড্রিনালিন।
অগ্ন্যাশয় গ্রন্থিউদর গহ্বরে পাকস্থলীর নিচে প্রায় অনুপ্রস্থভাবে অবস্থান করে।আলফা-কোশ: গ্লুকাগন, বিটা-কোশ: ইনসুলিন , ডেল্টা কোশ: সোমাটোস্ট্যাটিন।
শুক্রাশয় গ্রন্থিপুরুষ দেহের দেহগহ্বরের বাইরে উদরের নিম্নাংশে স্ক্রোটাম নামক থলিতে অবস্থিত।টেস্টোস্টেরন।
ডিম্বাশয় গ্রন্থিস্ত্রী দেহে উদরগহব্বরে জরায়ুর উভয় পাশে একটি করে মোট দুটি ডিম্বাশয় অবস্থিত।ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, রিলাক্সিন।

12. রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা কি? ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের পার্থক্য লেখো।
উত্তরঃ
– রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা: রক্তে শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ 100cc রক্তে 80-120mg। রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন নামক হরমোন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন –
(i) রক্তশর্করা হ্রাস: রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে ইনসুলিন রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে পরিণত করে (গ্লাইকোজেনেসিস) পেশি ও যকৃত সঞ্চয় করে।
(ii) রক্তশর্করা বৃদ্ধি: রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে গ্লুকাগন পেশি ও যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে গ্লাইকোজেনোলাইসিস প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজে বিশিষ্ট করে রক্তস্রোতে পাঠায়, ফলে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে।
ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের পার্থক্য:

বিষয়ইনসুলিনগ্লুকাগন
i. উৎসi. অগ্নাশয় আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর বিটাকোশi. অগ্নাশয়ের আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর আলফা কোশ
ii. রক্ত শর্করার প্রভাবii. রক্তশর্করার পরিমাণ কমায়ii. রক্ত শর্করার পরিমাণ বাড়ায়
iii. কার্বোহাইড্রেট বিপাকiii. গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষে সাহায্য করেiii. গ্লাইকোজেন থেকে গ্লুকোজ উৎপাদনে সাহায্য করে

13. প্রাণী হরমোন কাকে বলে? প্রাণী হরমোনের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তরঃ
– প্রাণী হরমোন: জীবদেহের কোন বিশেষ কোশগুচ্ছ বা অন্তক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত যে প্রোটিন, স্টেরয়েড বা অ্যামাইনোধর্মী জৈব রাসায়নিক পদার্থ কলারস, রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে উৎসস্থল থেকে অতি অল্প মাত্রায় লক্ষ্য কোশে বাহিত হয়ে কলাকোশের স্বাভাবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কাজের শেষে ধ্বংস হয়, তাকে প্রাণী হরমোন বা জু-হরমোন বলে।
প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্য:
i. উৎস: প্রাণী হরমোনগুলি সাধারণত অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে সংশ্লেষিত ও ক্ষরিত হয়। অন্তক্ষরা কোশযুক্ত কিছু অঙ্গ যেমন- শুক্রাশয়, ডিম্বাশয়, পাচননালির কিছু অংশ থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়।
ii. রাসায়নিক প্রকৃতি: প্রাণী হরমোন গুলি বিভিন্ন রাসায়নিক গঠন যুক্ত হয়, যেমন –
(a) প্রোটিনধর্মী: ইনসুলিন গ্লুকাগণ;
(b) পেপটাইডধর্মী: সিক্রেটিন, অক্সিটোসিন, ACTH;
(c) গ্লাইকোপ্রটিনধর্মী: FSH, TSH, LH;
(d) আয়োডিনধর্মী: থাইরক্সিন;
(e) স্টেরয়েডধর্মী: টেস্টোস্টেরন, প্রোজেস্টেরন, ইস্ট্রোজেন;
(f) লিপিডধর্মী: প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন;
(g) ক্যাটেকোলামাইনধর্মী: অ্যাড্রিনালিন, নর-অ্যাড্রিনালিন
(h) অ্যামাইনোধর্মী: এপিনেফ্রিন, থাইরক্সিন, মেলাটোনিন, অ্যাড্রিনালিন প্রভৃতি।
iii. পরিবহণের পদ্ধতি: অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে হরমোন ব্যাপন পদ্ধতিতে নিঃসৃত হওয়ার পর অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে বেষ্টন করে থাকা রক্তঝালক মধ্যস্থ রক্তে মিশ্রিত হয়। জলে দ্রবণীয় প্রোটিন হরমোন ও ক্যাটেকোলামাইন মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।
iv. হরমোন রাসায়নিক অনু হিসেবে টার্গেট কোশ কলা বা অঙ্গের উপর কাজ করে বিভিন্ন অঙ্গতন্ত্রের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে। হরমোন টার্গেট কোশের গ্রাহক প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সিগন্যাল ট্রান্সড্রাকশন পথকে সক্রিয় করে। এর ফলে কোশে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া সংঘটিত হয়।
v. পরিণতি: কাজের পর প্রাণীহরমোনগুলি বিনষ্ট হয় বা অন্য যৌগে পরিণত হয় এবং মূত্রের মাধ্যমে দ্রুত দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায়।
vi. বাহক: প্রাণীদেহে হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রাসায়নিক বার্তা কে দুতের মত লক্ষ্য অঙ্গে বহন করে নিয়ে যায় তাই হরমোনকে রাসায়নিক বার্তাবাহক বলা হয়।
vii. নিয়ন্ত্রক: অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন একটি প্রাণী হরমোন ক্ষরণ অপর আরেকটি গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে।

14. পিটুইটারি গ্রন্থির অবস্থান এবং ওই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ট্রপিক হরমোনগুলির নাম ও তাদের লক্ষ্য অঙ্গ উল্লেখ করো।
উত্তরঃ
– পিটুইটারি গ্রন্থির অবস্থান: মানব মস্তিষ্কের তৃতীয় প্রকোষ্ঠের নীচে স্ফেনয়েড অস্থির সেলাটারসিকা গহ্বরে পিটুইটারি গ্রন্থটি অবস্থিত।
পিটুইটারি নিঃসৃত ট্রপিক হরমোন: পিটুইটারি গ্রন্থির প্রধান দুটি অংশ বা খন্ড, যথা – অগ্রখন্ড বা অ্যাডিনো-হাইপোফাইসিস ও পশ্চাৎখন্ড বা নিউরোহাইপোফাইসিস। পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন ও তাদের লক্ষ্য অঙ্গ নীচের সারণির আকারে দেওয়া হল।

পিটুইটারি গ্রন্থির খন্ডহরমোনলক্ষ্য অঙ্গ
1. অগ্র খন্ড1.
i. সোমেটোট্রপিক হরমোন বা গ্রোথ হরমোন
ii. থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন
iii. অ্যাড্রিনোকর্টিকোর ট্রপিক হরমোন
iv. গোনাডোট্রপিক হরমোন
v. প্রোল্যাকটিন
1.
i. দেহকোশ অস্থি, পেশি, মেদকলা
ii. থাইরয়েড গ্রন্থি
iii. অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল
iv. শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়
v. স্তনগ্রন্থি (সন্তান প্রসবের পরে)
2. পশ্চাৎ খন্ড2.
i. অ্যান্টি-ডাই ইউরেটিক হরমোন (ADH) বা ভেসোপ্রেসিন
ii. অক্সিটোসিন
2.
i. নেফ্রনের দূরবর্তী সংবর্তনালিকা
ii. স্তনগ্রন্থি (সন্তান প্রসবের পরে), জরায়ু

15. হরমোন কে রাসায়নিক সম্বন্ধে সাধক বলে কেন? প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণস্থল ও কার্যাবলী উল্লেখ কর।
উত্তরঃ- হরমোনকে রাসায়নিক সমন্ধয়সাধক বলার কারন: হরমোন জীবদেহের নির্দিষ্ট স্থান থেকে ক্ষরিত হয়ে ধীরে ধীরে কলারস, রক্ত বা লসিকার মাধ্যামে টার্গেট কোশ বা অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর টার্গেট কলাকোশের মধ্যে বিপাকীয় কাজগুলি নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের মধ্যে সম্বন্ধেসাধন করে। এইভাবে সারা দেহের রাসায়নিক সমন্বয় গড়ে তোলার জন্য হরমোনকে রাসায়নিক সম্বন্ধেসাধক বলে।
মানবদেহে ডিম্বাশয় থেকে ক্ষরিত দুটি হরমোন হলো প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন। তাদের ক্ষরণস্থল ও কাজ উল্লেখ করা হল –
প্রোজেস্টেরন
ক্ষরণস্থল: ডিম্বাশয়ের পীতগ্রিন্থ থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ: i) গর্ভাবস্থা বজায় রাখা: এই হরমোন স্ত্রীদেহের গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় স্তনের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে।
ii) ভ্রুনের রোপণ: নিষিক্ত ডিম্বানু তথা ভ্রুনকে জরায়ুগাত্রে প্রতিস্থাপিত করে।
iii) আমরা গঠন: আমরা গঠনে সাহায্য করে।
iv) রজঃচক্র স্থগিত রাখা: গর্ভাবস্থায় রজঃচক্র বন্ধ থাকে।
v) প্রসবে ভূমিকা: প্রসবকালে যোনিপথের প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইস্ট্রোজেন
ক্ষরণস্থল: ডিম্বাশয় এর পরিণত ডিম্বথলি বা গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ: i) মুখ্য ও গৌণ জননাঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন: ডিম্বাশয়, ডিম্বনালি, জরায়ু, যোনি, স্তনগ্রন্থি প্রভৃতির বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনের সাহায্য করে।
ii) গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ: ইস্ট্রোজেন মহিলাদের গৌণ যৌন লক্ষণ, যেমন – সরু কণ্ঠস্বর, মসৃণ ও স্বল্প লোমবিশিষ্ট ত্বক প্রভৃতি প্রকাশের সাহায্য করে।
iii) রাজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ: এই হরমোনের স্ত্রীদেহে স্বাভাবিক নিয়মিত রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
iv) স্নেহ পদার্থের সঞ্চয়: ত্বকের নিচে স্নেহপদার্থের সঞ্চয়ে সাহায্য করে।
v) অন্যান্য কাজ: গর্ভাবস্থায় স্তনের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, গর্ভাবস্থায় জরায়ুর বৃদ্ধি ঘটায়, ইস্ট্রোজেন অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ফসফেট ধরে রাখতে পারে যা অস্থি গঠনে কাজে লাগে।

Class 10 Life Science Chapter 01 Question Answer 5 Marks | মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় 01 প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় – হরমোন – এর দীর্ঘউত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

Shares:

Related Posts

class-10-physical-science-chapter-05-mcq-answer
Class 10

Class 10 Physical Science Chapter 05 MCQ Answer | মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান অধ্যায় ০৫ – আলো প্রশ্ন ও উত্তর

এই নিবন্ধে আমরা মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান এর পনঞ্অচম ধ্যায় অর্থাৎ আলো এর বেশ কিছু অতি সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত, দীর্ঘ প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানবো। Class 10 Physical Science Chapter 05 MCQ Answer
class-10-history-chapter-08-mcq-answer
Class 10

Class 10 History Chapter 08 MCQ Answer মাধ্যমিক ইতিহাস অধ্যায় ০৬ – ঔপনিবেশিক ভারত প্রশ্ন ও উত্তর

এই নিবন্ধে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাস অষ্টম অধ্যায় অর্থাৎ বিঔপনিবেশিক ভারত এর বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানবো। Class 10 History Chapter 08 Questions Answer Class 10 History Chapter 08 MCQ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *