এই নিবন্ধে আমরা সপ্তম শ্রেণির দ্বাবিংশ অধ্যায় “ভারততীর্থ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)” কবিতার প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানবো। Class 07 Bangla Chapter 22 Question Answer
Class 7 Bangla Chapter 22 Question Answer সপ্তম শ্রেনীর বাংলা অধ্যায় ২২ “ভারততীর্থ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)” প্রশ্ন উত্তর
Table of Contents
নির্দেশ অনুসারে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১. কবিতায় ভারতভূমিকে ‘পুণ্যতীর্থ’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ ‘ভারততীর্থ’ কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষকে তীর্থভূমি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিশ্বমানবতাবাদের মিলনক্ষেত্র এটি। এখানকার মাটির মহিমায় মানুষে মানুষে বিভেদ ঘুচে গেছে, মুছে গেছে ধর্ম-বর্ণের পার্থক্য। তাই এ কবিতায় ভারতভূমিকে ‘পুণ্যতীর্থ’ বলা হয়েছে।
২. ‘মহামানবের সাগরতীরে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ ‘ভারততীর্থ’ কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষকে ‘মহামানবের সাগরতীর রূপে বর্ণনা করেছেন। সাগরে যেমন নানা নদীর ধারা এসে মিলিত হয়, তেমনি এখানেও নানা ধর্ম, নানা বর্ণ, নানা জাতি, নানা সম্প্রদায়ের মানুষ এসে মিলিত হয়েছে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে।
৩. ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে, কবিতা থেকে এমন একটি পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করো।
উত্তরঃ ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে কবিতায় এমন একটি পঙক্তি হল—‘ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর, নদী-জপমালা ধৃত প্রান্তর।’
৪. ভারতবর্ষকে পদানত করতে কোন কোন বিদেশি শক্তি অতীতে এসেছিল? তাদের পরিণতি কী ঘটল?
উত্তরঃ ভারতবর্ষকে পদানত করতে শক, হুন, পাঠান, মোগল, ইংরেজ প্রভৃতি বিদেশি শক্তি অতীতে এদেশে এসেছিল।
- ভারতবর্ষে এসে এদেশের মাটির মোহে, ঐক্যমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তারা সকলেই নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে এক দেহে লীন হয়ে গেল।
৫. “পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার’— উদ্ধৃতাংশে কোন পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে? এমন পরিস্থিতিতে কবির অন্বিষ্ট কী ?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ভারততীর্থ’ কবিতা থেকে গৃহীত।
- পশ্চিমি দেশগুলি তাদের যুক্তিবাদ, উন্নততর বিজ্ঞান-বাণিজ্য নিয়ে বিশ্বের সামনে হাজির হয়েছে। নানা আবিষ্কারে পশ্চিমী দেশগুলি সারা বিশ্বকে অবাক করেছে। এই পরিস্থিতির কথা এখানে বলা হয়েছে।
- এমন পরিস্থিতিতে কবির অন্বিষ্ট ভারতবর্ষেরও উচিত তার ব্রহ্মবাদী দর্শন, অধ্যাত্মবাদ, সংস্কৃতি প্রভৃতি নিজস্ব ঐতিহ্যকে পাশ্চাত্যের সামনে তুলে ধরা। যাতে দান-প্রতিদানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মিলে উন্নততর সভ্যতা গড়ে উঠতে পারে।
৬. ‘আমার শোণিতে রয়েছে ধ্বনিতে তার বিচিত্র সুর’— কোন্ সুরের কথা বলা হয়েছে? তাকে ‘বিচিত্র’ কেন বলা হয়েছে? কেনই বা সে সুর কবির রক্তে ধ্বনিত হয় ?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ভারততীর্থ’ কবিতা থেকে গৃহীত।
- এখানে ঐক্যের সুরের কথা বলা হয়েছে।
- নানাজাতি, নানা দেশ, নানা সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের বৈচিত্র্য নিয়ে ভারতসত্তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আত্মার আত্মীয় হয়ে মিশে গেছে এদেশের সংস্কৃতিতে। তাই তাকে বিচিত্র বলা হয়েছে।
- যুদ্ধের রণদামামা বাজিয়ে উন্মাদ কলরবে কেউ কেউ ছুঁয়েছিল এদেশের মাটি, আবার গিরি-পর্বত-মরুপথ পেরিয়ে কেউ এসেছিল ভারতবর্ষের সৌন্দর্য আহরণ করতে। তারা আজ দূরবর্তী কেউ নয় সবাই স্বজন সমব্যথী, আত্মার আত্মীয় হয়ে মিশে গেছে এদেশের সংস্কৃতিতে। ব্রতী হয়েছে এদেশের কল্যাণকর্মে। আর তাই বিচিত্রসুর একত্রিত হয়ে ঐক্যের সুর পবিত্র রক্তে ধ্বনিত হয়।
৭. ‘হে রুদ্রবীণা বাজো বাজো বাজো…..’—‘রুদ্রবীণা’ কী? কবি তার বেজে ওঠার প্রত্যাশী কেন?
উত্তরঃ এ উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ভারততীর্থ” নামক পাঠ্য কবিতা থেকে গৃহীত।
- ‘রুদ্রবীণা’ বলতে বোঝায় শিবের বীণা যা প্রলয়ের ডাক দেয়। রুদ্রবীণা বাজার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনে ও ইতিহাসে বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়। রুদ্রবীণার বাজনায় নানা অশুভ শক্তি দূর হয়ে যাবে, শুভ শক্তির জয় হবে। বিদ্বেষ ভুলে সকলে একাত্ম হয়ে উঠবে, এই আশা থেকেই কবি তার বেজে ওঠার প্রত্যাশী।
৮. ‘আছে সে ভাগ্যে লিখা’—ভাগ্যে কী লেখা আছে? সে লিখন পাঠ করে কবি তাঁর মনে কোন শপথ গ্রহণ করলেন ?
উত্তরঃ উপরিউক্ত অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ভারততীর্থ’ নামক পাঠ্য কবিতা থেকে গৃহীত।
- বিভিন্ন জাতির সম্মেলনে গড়ে ওঠা সুমধুর দেশ যখন পরাধীনতার দুঃসহ শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছিল, তখন এদেশের মানুষ ভোগ করেছে দুঃসহ জীবনযন্ত্রণা। সেই চরম দুঃসময়ে কত তরতাজা প্রাণ অকালে বিসর্জিত হয়েছে; রক্তনদীর স্রোতেস্নান করেও সইতে হয়েছে যন্ত্রণার দগ্ধ মুহূর্তগুলি। এই দুঃখ যন্ত্রণাই ভাগ্যে লেখা আছে। সে লিখন পাঠ করে কবি মনে মনে শপথ নেন দুঃখভার বহন করবেন, সহ্য করবেন। অপমান, লজ্জা, জয় করবেন। ঐক্যকে সার্থক করে তুলতে অনেক দুঃখ বহন করতে হবে তবেই দুঃসহ ব্যথার অবসান হয়ে নতুন দিনের শুরু হবে।
৯.’পোহায় রজনী’ – অন্ধকার রাত শেষে যে নতুন আশার আলোকজ্জ্বল দিন আসবে তার চিত্রটি কীভাবে ‘ভারততীর্থ কবিতায় রূপায়িত হয়েছে?
উত্তরঃ ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ভারততীর্থ’ কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে হয়েছে প্রজ্জ্বলিত হোমানলে দুঃখের সব রক্তশিখা জ্বলে পুড়ে গিয়ে শুরু হবে নতুন দিনের, দুঃখের অন্ধকার রাত শেষ হয়ে সুখের সূর্যালোক নতুন পথকে করবে মসৃণ। বহু প্রাণের বিনিময়ে সৃষ্টি হবে এক নতুন প্রাণের। মহামানবের তীর্থসম এই বিপুলা নীড় পরাধীনতা মুক্তির নব আনন্দে জেগে উঠবে।
১০. ‘মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা’— কবি কাদের ব্যাকুল আহ্বান জানিয়েছেন? কোন মায়ের কথা এখানে বলা হয়েছে? এ কোন অভিষেক? সে অভিষেক কীভাবে সম্পন্ন ও সার্থক হবে?
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ভারততীর্থ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত।
- উদ্ধৃত অংশে দেখি কবি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবসম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন। আর্য-অনার্য হিন্দু- মুসলমান-খ্রিস্টান, ইংরেজ, পতিত, ব্রাহ্মণ— এদের সকলকেই কবি মার অভিষেকে এগিয়ে আসতে বলেছেন।
- এখানে দেশ মাতা অর্থাৎ ভারতমায়ের কথা বলা হয়েছে। পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচন করে, নতুন দিনের আলোয় স্বাধীনতার অভিষেকের কথা এখানে বলা হয়েছে।
- জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একত্রিত হয়ে, পঞ্চশস্যের সমাহারের মতো সমস্ত শ্রোণির মানুষের সম্মেলনে মঙ্গলরূপ
- ঘটের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর জাতি- ধর্ম-বর্ণ বিভেদ ভূলে ভারতের তীর্থনীড়কে পবিত্র করার মাধ্যমেই অভিষেক সম্পন্ন ও সার্থক হবে।
১১. টীকা লেখো :
ওংকারধ্বনি, শক, হুন, মোগল, দ্রাবিড়, ইংরেজ
উত্তরঃ
- ওংকারধ্বনি : ওঁ ধ্বনিই ওংকারধ্বনি। এটি সব মন্ত্রের বীজমন্ত্র। ধ্বনিটি সংস্কৃত ‘অব’ ধাতু থেকে উৎপন্ন। ঈশ্বরবাচক ধ্বনি বা চিহ্ন এটি। এই ধ্বনি ব্রহ্মের প্রতীক। বেদ, উপনিষদ ও গীতা ও অন্যান্য হিন্দুশাস্ত্রের সবর্ত্রই এই ধ্বনির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একসময় বিভেদের মন্ত্র ভুলে সমন্বয়ের বেদমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিল ভারতবর্ষ। এই প্রসঙ্গে ওংকারধ্বনি শব্দটি কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে।
- শক : শক হল একটি প্রাচীন জাতি বিশেষ, যাদের আদি বাসস্থান ছিল মধ্য এশিয়ার সিরদরিয়া নদীর উত্তর অঞ্চলে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে তাদের আদি বাসভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা ভারতে প্রবেশ করে দুর্বল গ্রিক রাজ্যগুলিকে পরাজিত করে শক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। শকদের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন রুদ্রদমন। জুনাগড় শিলালিপি থেকে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়। গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ভারতের বুক থেকে শকদের নিশ্চিহ্ন করেন। ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসের আলোচনা প্রসঙ্গে কবি শক জাতির উল্লেখ করেছেন।
- হুন : হুনরা ছিল মধ্য এশিয়ার তুর্কি মোঙ্গলদের একটি শাখা। এরা শ্বেত হুন নামে পরিচিত । দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের পরবর্তীকালে হুন আক্রমণ শুরু হয়। ৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এরা ভারত আক্রমণ করে। শেষপর্যন্ত মালবের রাজা যশোবর্মন হুনদের প্রতিহত করেন। হুন আক্রমণের ফলে গুপ্ত সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। ভারতের অতীত ইতিহাসের আলোচনা প্রসঙ্গে কবি হুনজাতির উল্লেখ করেছেন।
- মোগল : দুর্ধর্ষ মোঙ্গল জাতিই মোগল নামে পরিচিত। এরা মঙ্গোলিয়ার অধিবাসী। বিভিন্ন রাজবংশের রাজত্বকালে ভারতে মোগল আক্রমণ হয়। ১২৯৭ থেকে ১৩০৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পাঁচ-ছ’বার মোঙ্গলরা ভারত আক্রমণ করে। আলাউদ্দীন খলজি এই আক্রমণ প্রতিহত করেন। ১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তুঘলক বংশের রাজত্বকালে তৈমুর লং ভারত আক্রমণ করে। এইভাবে নানা সময় মোগল আক্রমণ সংঘটিত হয়েছিল ভারতবর্ষে। ভারতের অতীত ইতিহাসের আলোচনা প্রসঙ্গে কবি মোগল জাতির উল্লেখ করেছেন।
- দ্রাবিড় : দ্রাবিড় হল ভারতবর্ষের এক প্রাচীনতম জাতি। আর্যরা এদেশে আসার অনেক আগে থেকেই এই জাতির অধিবাসীরা এদেশে বসবাস করতো। ভারতবর্ষে আর্যজাতি ও সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের বহুকাল আর থেকেই। ভারতবর্ষের দক্ষিণ প্রান্তে এদের বাস। দ্রাবিড় জাতি বিশ্বে এক নতুন ভাষাবংশের জন্ম দেয়। তামিল, তেলেগু, কন্নড় প্রভৃতি ভাষা এই দ্রাবিড় সংস্কৃতিরই ফসল।ভারতবর্ষে আর্যজাতি ও সংস্কৃত ভাষা বিপুল প্রভাব ফেললেও দ্রাবিড়রা তাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেনি।
- ইংরেজ : ইংল্যান্ডের অধিবাসীদের বলা হয় ইংরেজ। এরা প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ভারতবর্ষে বাণিজ করতে এসেছিল। কিন্তু ভারতের ঐশ্বর্যে প্রলুব্ধ হয়ে প্রায় ২০০ বছর এই জাতি ভারতে রাজত্ব করেছিল। পলাশির যুদ্ধে সিরাজ-উদ্-দৌলার পরাজয় থেকেই এই জাতির রাজত্বকালের সূচনা হয়। এরপর নানা অত্যাচার সহ্য করে, বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রাণ বিসর্জনের বিনিময়ে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজকে বিতাড়ণ করা সম্ভব হয়।ভারতের অতীত ইতিহাস আলোচনায় ইংরেজ জাতির কথা কবি উল্লেখ করেছেন।
১২. ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসের কথা কবিতায় কীভাবে বিধৃত হয়েছে?
উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ভারততীর্থ কবিতায় কবি ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। ভারতবর্ষের পুণ্যমাটিতে পৃথিবীর বহু জাতির আগমন ঘটেছে । স্রোতধারার মতো কত মানুষ ভেসে ভেসে ভারতসমুদ্রে মিশে গেছে। অতীতের পথ ধরে এদেশে আর্য, অনার্য, দ্রাবিড়, শক, হুন, পাঠান, মোগল, ইংরেজ প্রভৃতি জাতি নানা সময় ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছে। এই সমস্ত জাতি এসেছে কখনও শাসক হিসেবে কখনও লুণ্ঠনকারী হিসেবে। কিন্তু এদেশের মাটির মোহময় আকর্ষণ, সারল্য আর সম্প্রীতির হাতছানিতে তারা অনেকেই বাঁধা পড়েছে। ভারতবর্ষ যেন হয়ে উঠেছে মিলন ক্ষেত্র। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভুলে সকল মানব সম্প্রদায় এখানে একই সূত্রে বাঁধা পড়েছে। এই ভাবেই কবিতায় অতীত ইতিহাসের কাহিনি বিধৃত হয়েছে।
১৩. কবির দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ ভারতের যে স্বপ্নিল ছবি ধরা পড়েছে, তার পরিচয় নাও।
উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ভারততীর্থ’ কবিতায় কবি বিশ্বমানবতাবাদের পূণ্যতীর্থ ভারতবর্ষের জয়গান করেছেন।
- ভারতবর্ষ অধ্যাত্মবাদের পীঠস্থান, বিভেদের মন্ত্র ভুলে সমন্বয়ের বেদমন্ত্রে উজ্জীবিত ভারতবর্ষে গড়ে উঠেছে সম্প্রীতির ডোর। কিন্তু অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ, কৌলিন্য, সাম্প্রদায়িকতা এদেশকে উন্নতির পথে প্রধান অন্তরায়। সেই অভিশপ্ত বিভেদের বাণীকে ঐক্যের বাণীতে পরিণত করতে কবি আহ্বান জানিয়েছেন। দলিত, ব্রাহ্মণ, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সকলকে হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কবি স্বপ্ন দেখেছেন সকলের একাত্মতায় সকলের স্পর্শে পবিত্র হয়ে উঠবে দেশমাতৃকার তীর্থ নীড়। জাতি ধর্ম বর্ণ সমস্ত কিছু ভুলে দেশমাতৃকার অভিষেক করা হবে। ভরে উঠবে মঙ্গলঘট।
১৪. বাক্যে প্রয়োগ করো :
উদার, ধৃত, পবিত্র, লীন, মন্ত্র, অনল, বিপুল, বিচিত্র, সাধনা, জয়গান
উত্তরঃ
- উদার → ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অত্যন্ত উদার ছিলেন।
- ধৃত → চোরটি পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়েছে।
- পবিত্র → গঙ্গাজলকে হিন্দুরা খুব পবিত্ৰ বলে মানে।
- লীন → মোহনার কাছে এসে নদী সমুদ্রে লীন হয়ে যায়।
- মন্ত্র → পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণে দূর্গা পূজার শুরু হলো।
- অনল → আমার সাধের ঘরখানি অনলে পুড়ে গেল।
- বিপুল → বন্যার বিপুল জলরাশি গোটা মাঠে থৈ থৈ করছে।
- বিচিত্র → পূজোর বাজারে বিচিত্র পোশাক দেখা যায়।
- সাধনা → শুধুমাত্র মন্দিরে বসে ঈশ্বর সাধনা করলেই ভগবানের দেখা মেলে না।
- জয়গান → ভারতীয়রা ভারতবর্ষের জয়গান করেন।
১৫. প্রতিশব্দ লেখো :
সাগর, ধরিত্রী, ভূধর, হিয়া, রজনী, নীর
উত্তরঃ
- সাগর → সমুদ্র, অর্ণব।
- ধরিত্রী → পৃথিবী, ধরা।
- ভূধর → পর্বত, নগ।
- হিয়া → মন, হৃদয়।
- রজনী → নিশা, রাত।
- নীর → জল, বারি।
১৬. ‘শালা’ শব্দের একটি অর্থ গৃহ, আগার।
‘যজ্ঞশালা’র অনুরূপ ‘শালা’ পনযুক্ত আরো পাঁচটি শব্দ লেখো :
উত্তরঃ রন্ধনশালা, পাঠশালা, ভাঁটিশালা, ধর্মশালা, কর্মশালা।
১৭. নীচের পঙক্তিগুলি গদ্য বাক্যে লেখো :
১৭.১. দুর্বার স্রোত এল কোথা হতে, সমুদ্রে হলো হারা।
উত্তরঃ কোথা থেকে দুর্বার স্রোত এল সমুদ্রে হারিয়ে গেল।
১৭.২. উদার ছন্দে পরমানন্দে বন্দন করি তারে।
উত্তরঃ পরমানন্দের সঙ্গে উদার ছন্দে তাকে বন্দনা করি।
১৭.৩. হৃদয়তন্ত্রে উঠেছিল রণরণি।
উত্তরঃ হৃদয়তন্ত্রে রণরনিয়ে উঠেছিল।
১৭.৪. হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে।
উত্তরঃ এখানে রোজ পবিত্র ধরিত্রীকে চোখে দেখো।
১৭.৫. হেথায় সবারে হবে মিলিবারে আনত শিরে।
উত্তরঃ এখানে মাথা নীচু করে সবাইকে মিলিত হতে হল।
১৮. বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে পরিবর্তিত করো।।
চিত্ত,পুণ্য,পবিত্র, দুঃখ, তপস্যা, জয়, এক, জন্ম, বিচিত্র,লাজ
উত্তরঃ
- চিত্ত → চিত্তাকর্ষক
- পুণ্য → পুণ্যবান
- পবিত্র → পবিত্রতা
- দুঃখ → দুঃখী
- তপস্যা → তপস্বী
- জয় → জয়ী
- এক → ঐক্য
- জন্ম → জন্মগত
- বিচিত্র → বৈচিত্র্য
- লাজ → লাজুক।
১৯. সন্ধি বিচ্ছেদ করো :
পরমানন্দ, দুর্বার, দুঃসহ, ওংকার, হোমানল
উত্তরঃ
- পরমানন্দ → পরম + আনন্দ
- দুর্বার → দুঃ + বার
- দুঃসহ → দুঃ + সহ
- ওংকার → ওম্ + কার
- হোমানল → হোম + অনল
২০. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :
পুণ্য,বিচিত্র,ধীর,ধৃত,বহু,অপমান,আহ্বান,দুর্বার,বিপুল
উত্তরঃ
- পুণ্য → পাপ
- বিচিত্র → একঘেয়ে
- ধীর → দ্রুত
- ধৃত → মুক্ত
- বহু → অল্প
- অপমান → সম্মান
- আহ্বান → বিদায়
- দুর্বার → শ্লথ
- বিপুল → সামান্য