এই নিবন্ধে আমরা মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান এর অষ্টম অধ্যায় অর্থাৎ রাসায়নিক সমীকরণ এর বেশ কিছু অতি সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত, দীর্ঘ প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানবো। Class 10 Physical Science Chapter 8 MCQ Answer |
Class 10 Physical Science Chapter 08 MCQ Answer | মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান অধ্যায় ০৮ – ভাগ-২ রাসায়নিক সমীকরণ প্রশ্ন ও উত্তর
Table of Contents
A. বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি চিহ্নিত করো : [প্রতিটি প্রশ্নমান-1]
1. নীচের কোনটির ইলেকট্রন বিন্যাস সুস্থিত হয় ?
[A] Xe [B] Kr [C] Ar [D] Br
উত্তর : [D] Br
2. কোন প্রকার বন্ধনের সুনির্দিষ্ট অভিমুখ থাকে না
[A] সমযোজী
[B] অসমযোজী
[C[ তড়িৎযোজী
[D] সবগুলি
উত্তর : [C[ তড়িৎযোজী
3. দুটি পরমাণুর মধ্যে সর্বাধিক কয়টি সমযোজী বন্ধন গঠিত হতে পারে ?
[A] 1টি
[B] 2টি
[C] 3টি
[D] 4টি
উত্তর : [C] 3টি
4. তড়িৎ পরিবহণে অক্ষম—
[A] NaCl
[B] HCI
[C] CuSO 4
[D] C6H12 O6
উত্তর : [D] C6H12 O6
5. নীচের কোনটি সমযোজী যৌগের ধর্ম নয়?
[A] জলে অদ্রবণীয়
[B] নিম্ন গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক
[C] তড়িৎ এর সুপরিবাহী
[D] নরম কঠিন, তরল বা গ্যাস
উত্তর : [C] তড়িৎ এর সুপরিবাহী
6. তড়িৎযোজী যৌগের গলনাঙ্ক —
[A] খুব বেশি হয়।
[B] খুব কম হয়
[C] মধ্যম মানের হয়
[D] কখনও বেশি ও কখনও কম হয়
উত্তর : [A] খুব বেশি হয়।
7. একটি পোলার দ্রাবকের উদাহরণ হল—
[A] বেঞ্জিন
[B] ইথার
[C] ক্লোরোফর্ম
[D] জল
উত্তর : [D] জল
৪. আয়নীয় বন্ধনের ধারণা দেন বিজ্ঞানী-
[A] ডালটন
[B] লুইস
[C] কোসেল
[D] অ্যাভোগাড্রো
উত্তর : [C] কোসেল
9. হ্যালোজেনের যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা—
[A] 1
[B] 3
[C] 5
[D] 7
উত্তর : [D] 7
10. যোজ্যতার ইলেকট্রনীয় তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন-
[A] লুইস ও কোসেল
[B] বর্ন ও হেবার
[C] প্রাউস্ট
[D] অ্যাভোগাড্রো
উত্তর : [A] লুইস ও কোসেল
11. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এরূপ একটি সমযোজী যৌগ হল—
[A] কাপড় কাচার সোডা
[B] ফটকিরি
[C] জল
[D] চক
উত্তর :
12. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এরূপ একটি তড়িৎযোজী যৌগ হল—
[A] খাদ্যলবণ
[B] জল
[C] চিনি
[D] কেরোসিন
উত্তর : [A] খাদ্যলবণ
13. নীচের কোন্ মৌলটি তড়িৎযোজী ও সমযোজী দু’প্রকার বন্ধন গঠনে সক্ষম?
[A] H
[B] C
[C] F
[D] Ne
উত্তর : [C] F
14. কোটির গলনাঙ্ক সবচেয়ে বেশি ?
[A] চিনি
[B] ন্যাপথলিন
[C] মোম
[D] NaCl
উত্তর : [D] NaCl
15. কোনটি জলে অদ্রাব্য-
[A] MgCl2
[B] NaSO4
[C] CHCI3
[D] HCI
উত্তর : [C] CHCI3
B.অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :[প্রশ্নমান-1]
শূন্যস্থান পূরণ করো :
1. বিজ্ঞানী…………………… সমযোজী বন্ধনের মডেল উপস্থাপন করেন।
2. মৌলের সমযোজ্যতা পরিমাপ করা হয় গঠিত…………………………….. সংখ্যার দ্বারা ।
3. কোনো পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে আয়নে পরিণত হয়ে …………………………… লাভ করে।
4. একই প্রকারের 4টি বন্ধন আছে এমন সমযোজী পদার্থের উদাহরণ হল………………………………
5. আয়নীর যৌগের ক্ষেত্রে…………………………….. দ্বারা ওজন পরিমাপ করা যায়।
উত্তর : (1) গিলবার্ট নিউটন লুইস। (2) ইলেকট্রন-জোড়। (3) সুস্থিতি। (4) মিথেন। (5) সঙ্কেত ওজন।
সত্য বা মিথ্যা নির্ণয় করো :[প্রশ্নমান-1]
1. তড়িৎ পরিবহণে অক্ষম Cg H12O6 |
2. কার্বনে একাধিক যোজ্যতা দেখা যায়।
3. একটি পোলার দ্রাবকের উদাহরণ হল বেঞ্জিন।
4. আয়নীয় বন্ধনের ধারনা দেন বিজ্ঞানী কোসেল।
5. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এরূপ একটি তড়িৎযোজী যৌগ হল খাদ্যলবণ।
উত্তর : (1) সত্য । (2) মিথ্যা। (3) মিথ্যা। (4) সত্য। (5) সত্য।
‘অ’ স্তম্ভের সঙ্গে আ’স্তম্ভ মেলাও :[প্রশ্নমান-1]
‘অ’ স্তম্ভ
1. জলে অদ্রাব্য
2. পোলার দ্রাবক
3. তড়িৎ যোজী যৌগ
4. অধুবীয় দ্রাবক
‘আ’ স্তম্ভ
(a) NaCl
(b) Co Ho
(c) H2O
(d) CHCI g
উত্তর : 1⇒ (d) 2-(c) 3-(a) 4 → (b)
‘অ’ স্তম্ভ
1. আয়নীয় বন্ধনের ধারনা
2. সমযোজী বন্ধনের ধারনা
3. তড়িৎযোজী যৌগ
4. সমযোজী যৌগ
“আ’স্তম্ভ
(a) মিথেন
(b) কোসেন
(c) সোডিয়াম ক্লোরাইড
(d) লুইস
উত্তর : 1 (b) 2 (d) 3-(c) 4 →(a)
দু-একটি বাক্যে উত্তর দাও : [প্রশ্নমান-১]
1. সমযোজী দ্বিবন্ধন আছে এমন হাইড্রোকার্বন যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর : ইথিলিন (C2H2) একটি হাইড্রোকার্বন যৌগ যার অণুতে সমযোজী দ্বি-বন্ধন আছে।
2. কার্বনের নিকটতম নিষ্ক্রিয় মৌল কোনটি?
উত্তর : কার্বনের নিকটতম নিস্ক্রিয় মৌল হল নিয়ন (Ne) |
3. নোবেল গ্যাস মৌলগুলির অস্তিত্ব প্রথম কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর : নোবেল গ্যাস মৌলগুলির অস্তিত্ব প্রথম আবিস্কার করেন বিজ্ঞানী ব্যালে ও ব্যামজে।
4. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এমন একটি তড়িৎযোজী যৌগের নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর : দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় তড়িৎযোজী যৌগের নাম হল খাদ্য লবণ (NaCl)।
5. তড়িৎযোজী যৌগের ক্ষুদ্রতম এককের নাম কী ?
উত্তর : তড়িৎযোজী যৌগের ক্ষুদ্রতম একক হল আয়ন
6. কোন্ বিজ্ঞানী আয়নীয় বন্ধনের ধারণা দেন?
উত্তর : বিজ্ঞানী কোসেল।
7. একটি কঠিন অনুায়ী সমযোজী যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর : কঠিন অনুদ্বায়ী সমযোজী যৌগ হল চিনি বা কেনসুগার (C12H22O11) ।
৪. লুইস ডট ডায়াগ্রাম কী ?
উত্তর : ইলেকট্রন বিন্দু (dot) দিয়ে চিহ্নিত করে একটি সমযোজী বন্ধনের জন্য দুটি পরমাণুর মাঝে একজোড়া বা একের অধিক জোড় বিন্দু ব্যবহার করে সমযোজী যৌগের গঠন প্রকাশের পদ্ধতিকে লুইস ডট ডায়াগ্রাম বলে।
9. যোজ্যতা কক্ষ কী ?
উত্তর : পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষকে যোজ্যতা কক্ষ বলে ।
10. নাইট্রোজেন অণুতে কয়টি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় আছে?
উত্তর : নাইট্রোজেন অণুতে দুটি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় আছে (N= N)।
11. কোন্ বিজ্ঞানী সমযোজী বন্ধনের ধারণা দেন?
উত্তর : সমযোজী বন্ধনের ধারণা দেন বিজ্ঞানী জি. এন. লুইস।
12. একটি অধুবীয় দ্রাবকের উদাহরণ দাও।
উত্তর : বেঞ্জিন অধুবীয় দ্রাবকের উদাহরণ।
13. জল ও বেঞ্জিনের মধ্যে কোটিতে কেরোসিন দ্রবীভূত হবে ?
উত্তর : সমযোজী পদার্থ হওয়ায় কেরোসিন বেঞ্জিনে দ্রবীভূত হবে।
14. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এমন একটি সমযোজী যৌগের নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর : সমযোজী যৌগের নাম হল গ্লুকোজ (C6H12O6)।
C. সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [ প্রতিটি প্রশ্নমান-2 ]
1. তড়িৎযোজ্যতা কাকে বলে ?
উত্তর : নিকটতম নিস্ক্রিয় গ্যাসের পরমাণুর মতো ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভের চেষ্টায় কিছু পরমাণু এক বা একাধিক ইলেকট্রন আগ করে সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস বিশিষ্ট ক্যাটায়নে পরিণত হয় এবং কিছু পরমাণু এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে সুস্থিত ইলেকট্রন-বিন্যাসবিশিষ্ট অ্যানায়নে পরিণত হয়। ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের মধ্যে স্থির তড়িৎ-আকর্ষণ বলের মাধ্যমে যৌগ গঠনের ক্ষমতাকে তড়িৎযোজ্যতা বা আয়নীয় যোজ্যতা বলে।
2. আয়নীয় যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি হয় কেন ?
উত্তর : আয়নীয় যৌগে বিপরীত তড়িৎধর্মী আয়নসমূহের মধ্যে তীব্র আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে বলে আয়নীয় যৌগের কেলাস ঘনসংঘবন্ধ হয়। ফলে আয়নীয় যৌগের কেলাস থেকে আয়নগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। তাই আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি হয়।
3. আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়ার হার দ্রুত হয় কেন ?
উত্তর : দ্রবণে তড়িৎযোজী যৌগগুলি আয়নরূপে অবস্থান করে। দ্রবণে আয়নীয় যৌগের রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রকৃতপক্ষে ওই যৌগের উপাদান আয়নসমূহের বিক্রিয়া। অন্যভাবে বলা যায়, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এই আয়নগুলিই অংশগ্রহণ করে। দ্রবণে উপস্থিত এই বিপরীতধর্মী আয়নগুলি অধিক দ্রুততার সঙ্গে আয়নীয় যৌগের বিক্রিয়া সম্পন্ন করে।
4. সমযোজ্যতা কাকে বলে ?
উত্তর : নিকটতম নিস্ক্রিয় মৌলের মতো সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের চেষ্টায় একই বা ভিন্ন মৌলের দুটি পরমাণু ভূমিস্তরে বা উদ্দীপ্ত শক্তি স্তরে তাদের সর্ববহিস্থ কক্ষের অযুগ্ম ইলেকট্রনগুলির মিলনে গঠিত এক বা একাধিক ইলেকট্রন-জোড় সমভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে রাসায়নিক ভাবে মিলিত হওয়ার যে ক্ষমতা লাভ করে তাকে সমযোজ্যতা বলে ।
5. সমযোজী বন্ধন এবং সমযোজী যৌগ কাকে বলে ?
উত্তর : দুটি পরমাণুর মধ্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন-জোড় (বন্ধন সৃষ্টিকারী প্রতিটি পরমাণু থেকে আগত সমসংখ্যক ইলেকট্রন দিয়ে গঠিত) সমভাবে ব্যবহৃত হয়ে যে রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়, তাকে সমযোজী বন্ধন বলে। সমযোজী বন্ধন সমন্বিত যৌগকে সমযোজী যৌগ বলা হয় ।
6. অষ্টক সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি উল্লেখ করো। অষ্টক সূত্র মেনে চলে এমন দুটি যৌগের নাম লেখো।
উত্তর : অষ্টক সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি নিম্নরূপ—
(i) কিছু অণুর কেন্দ্রীয় পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে ৪টির কম বা বেশি ইলেকট্রন থাকা সত্ত্বেও অণুগুলি যথেষ্ট স্থিতিশীল। এই ঘটনা অষ্টক সূত্রানুসারে ব্যাখ্যা করা যায় না। CH (মিথেন), NaCl (সোডিয়াম ক্লোরাইড) অষ্টক সূত্র মেনে চলে।
(ii) নোল গ্যাসগুলির নিষ্ক্রিয়তার ভিত্তিতে অষ্টক সূত্র প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কিছু নোব্ল গ্যাস অক্সিজেন বা ফ্লুরিনের সাথে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে।
(iii) এই সূত্র বিভিন্ন অণুর তুলনামূলক স্থিতিশীলতাকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
7. তড়িৎ যোজ্যতার পরিমাণ কীভাবে করা হয় উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : যৌগ-গঠনের সময় একটি পরমাণু যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে বা গ্রহণ করে, সেই সংখ্যা দ্বারা ওই পরমাণুর তড়িৎ-যোজ্যতা পরিমাপ করা হয়। যেমন NaCl যৌগ গঠন করার সময় Na পরমাণুগুলি একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na’ আয়নে এবং CI পরমাণুগুলি একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে CI আয়নে পরিণত হয়। অতএব, NaCl যৌগে সোডিয়ামের তড়িৎযোজ্যতা 1 এবং ক্লোরিনের যোজ্যতা 1।
৪. চিনি বা গ্লুকোজ সমযোজী পদার্থ হলেও জলে দ্রবীভূত হয় কেন?
উত্তর : জল একটি ধ্রুবীয় দ্রাবক যার অক্সিজেন পরমাণু ঋণাত্মক আধান গ্রস্ত ও হাইড্রোজেন পরমাণু দুটি ধনাত্মক আধানগ্রস্ত। চিনি বা গ্লুকোজের অণুতে -OH মূলক থাকে যার O পরমাণু উচ্চ তড়িৎ-ঋণাত্মক হওয়ায় OH বন্ধনটি পোলার প্রকৃতির ও H প্রান্ত কিছুটা ধনাত্মক আধানযুক্ত। এর ফলে জলের ঋণাত্মক O- পরমাণু ও চিনি বা গ্লুকোজের ধনাত্মক H-পরমাণুর (O-H গ্রুপের) মধ্যে তড়িৎ আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। এর ফলেই চিনি বা গ্লুকোজের অণুগুলি জলে দ্রবীভূত হয়।
9. অক্সিজেন অণুর লুইস-ডট ডায়াগ্রামের যথার্থতা বিচার করো।
উত্তর : দুটি O-পরমাণু ( 2.6) পরস্পরের সঙ্গে দুটি ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে O = O বন্ধন সৃষ্টি করে এবং Ne পরমাণুর সুস্থিত ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করে। কিন্তু এই লুইস-ডট ডায়াগ্রাম অক্সিজেন অণুর গঠন সম্পর্কিত পরীক্ষালব্ধ ফলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় একে বর্জন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে O2 অণুর এমন কোনো লুইস-ডট ডায়াগ্রাম অঙ্কন করা সম্ভব নয় যা পরীক্ষালব্ধ ফলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
10. রাসায়নিক বন্ধন কাকে বলে?
উত্তর : যোজ্যতা-কক্ষে ইলেকট্রন গ্রহণ অথবা যোজ্যতা-কক্ষ থেকে ইলেকট্রন বর্জন অথবা ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পরমাণুগুলির সর্ববহিঃস্থ কক্ষে নিকটতম নিস্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জনের ফলে যে আকর্ষণ বলের সৃষ্টি হয় তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।
11. অষ্টক সূত্র কাকে বলে ?
উত্তর : রাসায়নিকভাবে সুস্থিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন মৌলের পরমাণু তাদের যোজ্যতাকক্ষে ইলেকট্রন গ্রহণ বা যোজ্যতা কক্ষ থেকে ইলেকট্রন বর্জন বা ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভের প্রবণতা দেখায়। মৌলসমূহের পরমাণুগুলির সর্ববহিঃস্থ ইলেকট্রনীয় কক্ষের অষ্টক পূর্ণ করার স্বাভাবিক প্রবণতাকে অষ্টক সূত্র বলে।
D. দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর : [ প্রতিটি প্রশ্নমান-5]
1. সমযোজী যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি আলোচনা করো।
উত্তর : সমযোজী যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি নিম্নরূপ—
(i) যোজক-ইলেকট্রনের সংখ্যা : সমযোজী বন্ধন গঠনের অংশগ্রহণকারী পরমাণু দুটির প্রতিটির যোজক-ইলেকট্রনের সংখ্যা 4, 5, 6 বা 7 হতে হবে (H-পরমাণু ছাড়া)।
(ii) পরমাণুগুলির আয়নন শক্তি : সমযোজী বন্ধন গঠিত হতে হলে বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণকারী পরমাণুগুলির আয়নন শক্তি বেশি হতে হবে।
(iii) ইলেকট্রন-আসক্তি : সমযোজী বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণকারী পরমাণু দুটির ইলেকট্রন আসক্তি প্রায় সমান হতে হবে।
(iv) তড়িৎ-ঋণাত্মকতা : সমযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরমাণু দুটির তড়িৎ-ঋণাত্মকতার মান সমান বা প্রায় সমান হতে হবে।
2. সমযোজী ও তড়িৎযোজী যৌগের তিনটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর : সমযোজী যৌগ ও তড়িৎযোজী যৌগের পার্থক্যগুলি-
সমযোজী যৌগ
i) যৌগগুলি অণুর সমন্বয়ে গঠিত। এই যৌগে আয়নের কোনো অস্তিত্ব নেই।
ii) যৌগগুলি কোনো অবস্থাতেই
আয়নিত হয় না। এরা তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ।
iii) যৌগগুলি সাধারণত জলে অদ্রাব্য, কিন্তু জৈব দ্রাবকে দ্রাব্য।
তড়িৎযোজী যৌগ
i) যৌগগুলি বিপরীতধর্মী আয়নের সমবায়ে গঠিত। এই যৌগে অণুর কোনো অস্তিত্ব নেই।
ii) যৌগগুলি জলীয় দ্রবণে ও গলিত অবস্থায় আয়নিত হয়। এরা তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ। কিন্তু কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না। iii যৌগগুলি সাধারণত জলে দ্রাব্য, কিন্তু জৈব দ্রাবকে অদ্রাব্য ।
3. লুইস ডট গঠনসহ CaO (ক্যালশিয়াম অক্সাইড)-এর গঠন আঁকো ও ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : ক্যালশিয়াম ও অক্সিজেন পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে যথাক্রমে 2টি ও 6টি ইলেকট্রন উপস্থিত আছে সুতরাং সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের চেষ্টায় ক্যালশিয়াম পরমাণু তার সবচেয়ে বইেরের কক্ষের দুটি ইলেকট্রন বর্জন করে Ca2+ আয়নে পরিণত হয়। এবং অক্সিজেন পরমাণু ওই বর্জিত ইলেকট্রন বর্জিত ইলেকট্রন দুটি গ্রহণ করে ০2- আয়নে পরিণত হয়। এই Ca2+ এবং O2- আয়ন পারস্পরিক তড়িৎ আকর্ষণের ফলে যুক্ত হয়ে CaO অণু গঠন করে। তাই CaO অণু তড়িৎযোজী।
4. তড়িৎযোজী যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের মান অনেক বেশি হয় কেন ?
উত্তর : তড়িৎযোজী যৌগের মধ্যস্থিত ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের সজ্জা অনেক সুশৃঙ্খল প্রকৃতির হয় ও স্থায়ী কেলাস তৈরি করে। এইরূপ কেলাসে উপস্থিত ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির মধ্যে তীব্র-তড়িৎ আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে, তাই এদের বিচ্ছিন্ন করতে অধিক তাপশক্তির প্রয়োজন হয়।
5. Na ও Cl পরমাণু থেকে কীভাবে NaCl অণু গঠিত হয়?
উত্তর : প্রথম ধাপে Na পরমাণু তার সর্ববহিঃস্থ কক্ষ থেকে 1টি ইলেকট্রন বর্জন করে Na+ ক্যাটায়ন তৈরি করে ও সুস্থিত নিয়ন গ্যাসের ইলেকট্রনীয় বিন্যাস লাভ করে। অন্যদিকে CI পরমাণু তার সর্ববহিঃস্থ কক্ষে ওই বর্জিত ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl- অ্যানায়ন তৈরি করে ও সুস্থিত আর্গন গ্যাসের মতো ইলেকট্রনীয় বিন্যাস লাভ করে। উৎপন্ন Na+ ক্যাটায়ন ও CI- অ্যানায়ন পারস্পরিক তড়িৎ আকর্ষণের দ্বারা যুক্ত হয়ে NaCl অণু গঠন করে।
6. উপযুক্ত বর্ণনাসহ HCl অণুর লুইস ডট গঠন আঁকো।
উত্তর : H পরমাণু ও CI পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে যথাক্রমে 1টি ও 7টি করে ইলেকট্রন থাকে। HCI অণু গঠনকালে হাইড্রোজেন পরমাণুর 1টি ইলেকট্রন ও ক্লোরিন পরমাণুর একটি ইলেকট্রন পরস্পর যুক্ত হয়ে একটি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে। উভয় (HCI) পরমাণু ওই ইলেকট্রন জোড় সমভাবে ব্যবহার করে নিজেদের সবচেয়ে বাইরের কক্ষের অষ্টক পূর্ণ করে ও HCI অণু গঠন করে। তাই HCI সমযোজী প্রকৃতির হয়।
7. লুইস ডট গঠন সহ H2O এর গঠন আঁকো ও ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : অক্সিজেন পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে 6টি ইলেকট্রন আছে। নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়নের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করার জন্য অক্সিজেন পরমাণুর আরও 2টি অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন প্রয়োজন। তাই অক্সিজেন পরমাণুর বাইরের কক্ষের ২টি ইলেকট্রন, 2টি হাইড্রোজেন পরমাণুর প্রত্যেকটির 1টি ইলেকট্রনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পৃথকভাবে 2টি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে। এই দুটি ইলেকট্রন জোড়কে সমভাবে ব্যবহার করে অক্সিজেন পরমাণু (O) নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়নের মতো ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে এবং প্রতিটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H) নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়ামের মতো ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে জল (H2O) অণু গঠন করে। তাই H2O অণু সমযোজী হয়।
৪. তড়িৎযোজী যৌগের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর : (i) তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত কঠিন ও কেলাসাকার হয়।
(ii) তড়িৎযোজী যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অনেক বেশি হয়, অনুায়ী
(ii) তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত ধ্রুবীয় ও পোলার হয়।
(iv) তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত তড়িৎবিশ্লেষ্য, যা গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে।