এই নিবন্ধে আমরা মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান এর প্রথম অধ্যায় অর্থাৎ পরিবেশের জন্য ভাবনা এর বেশ কিছু অতি সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত, দীর্ঘ প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানবো। Class 10 Physical Science Chapter 01 MCQ Answer | মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান অধ্যায় ০১ – পরিবেশের জন্য ভাবনা প্রশ্ন ও উত্তর | মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান অধ্যায় ০১ – পরিবেশের জন্য ভাবনা-এর অতি সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত, দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
Class 10 Physical Science Chapter 01 MCQ Answer | মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান অধ্যায় ০১ – পরিবেশের জন্য ভাবনা প্রশ্ন ও উত্তর
Table of Contents
1. বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় পদার্থের সম্ভাব্য মোট ভর কত?
ans:বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় পদার্থের সম্ভাব্য মোট ভর প্রায় 5.5 × 1015 ton |
2. বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ স্তর দুটির নাম লেখো ।
ans:বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটি হল ট্রোপোস্ফিয়ার ও সর্বোচ্চ স্তরটি হল এক্সোস্ফিয়ার।
3. ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে ট্রোপোস্ফিয়ারের অবস্থান লেখো ।
ans:ভূপৃষ্ঠ থেকে 12 km উচ্চতা পর্যন্ত ট্রোপোস্ফিয়ার বিস্তৃত ।
4. ট্রোপোস্ফিয়ারে উপস্থিত বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানগুলি কী কী ?
ans: N2, O2, CO2, H2O (জলীয় বাষ্প)।
5. নিরক্ষীয় অঞ্চল ও মেরু অঞ্চলে ট্রোপোস্ফিয়ারের বিস্তার কতখানি ?
ans: ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরটি মেরু অঞ্চলে প্রায় 8-9 km পর্যন্ত এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় 16-18 km পর্যন্ত বিস্তৃত।
6. ট্রোপোস্ফিয়ারের সর্বনিম্ন অঞ্চলে বায়ুর চাপ কত?
ans:76 cm পারদস্তম্ভের চাপের সমান ।
7. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরটি আবহমণ্ডল বলে পরিচিত?
ans:বায়ুমণ্ডলের ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরটি আবহমণ্ডল বলে পরিচিত।
8. ট্রোপোস্ফিয়ারে উচ্চতাভেদে, উষ্ণতার সাধারণত কীরূপ পরিবর্তন?
ans:উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরের উষ্ণতা ক্রমশ হ্রাস পায়।
9.বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরকে ‘ক্রমহ্রাসমান উষ্ণতা স্তর’ বলা হয় ?
ans:ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরটিকে ‘ক্রমহ্রাসমান উষ্ণতা স্তর’ বলা হয়।
10. ট্রোপোস্ফিয়ারের সর্বনিম্ন উষ্ণতা কোন্ অংশে দেখা যায় ?
ans: নিরক্ষরেখার ঊর্ধ্বে ট্রোপোপজ অংশে।
11. ট্রোপোপজ কী?
ans:ভূপৃষ্ঠ থেকে 12 km উচ্চতার আশেপাশে যে অঞ্চলে ট্রোপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংযোগ ঘটে এবং উচ্চতার পরিবর্তনেও উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকে তাকে ট্রোপোপজ বলে।
12. ট্রোপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় উষ্ণতা কত থাকে?
ans:ট্রোপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় উষ্ণতা প্রায় -56 °C।
13. বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানগুলি কোন স্তরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় ?
ans:ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
14. ভূপৃষ্ঠের জীবজগৎ বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকে?
ans:ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকে।
15. ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই লক্ষ করা যায় যে একটি নির্দিষ্ট হারে উষ্ণতা হ্রাস পেতে থাকে। এই ঘটনাকে কী বলা হয় ?
ans:ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে ওঠার সময় নির্দিষ্ট হারে উষ্ণতা হ্রাসের ঘটনাকে বলে সাধারণ তাপ হ্রাস বা নর্মাল ল্যাপ্স্ রেট।
16. জেট স্ট্রিম নামক প্রবল গতিপূর্ণ বায়ুস্রোত বায়ুমণ্ডলের কোন অঞ্চলে প্রবাহিত হয় ?
ans:জেট স্ট্রিম ট্রোপোপজ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়।
17. ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরিভাগ থেকে কত উচ্চতা পর্যন্ত স্ট্যাটোস্ফিয়ার বিস্তৃত?
ans:ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরিভাগ থেকে প্রায় 45 km উচ্চতা পর্যন্ত।
18. স্ট্যাটোপজ কী?
ans:স্ট্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের সংযোগস্থলে যে অঞ্চলে উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে ।
19. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরের মধ্য দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে ?
ans: স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্য দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে।
20. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরকে শান্তমণ্ডল বলে?
ans:স্ট্যাটোস্ফিয়ারকে শান্তমণ্ডল বলে।
21. স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা বাড়লে বায়ুর উষ্ণতার কী পরিবর্তন হয় ?
ans:বায়ুর উষ্ণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷
22. ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে ওজোনোস্ফিয়ারের অবস্থান লেখো।
ans:ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 16 km থেকে 30 km উচ্চতা পর্যন্ত ওজোনোস্ফিয়ার বিস্তৃত।
23. স্ট্যাটোস্ফিয়ারের কয়েকটি গ্যাসীয় উপাদান-এর নাম লেখো।
ans: N2, O2, O3 ।
24. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরটি শীতলতম ?
ans:মেসোস্ফিয়ার হল বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর।
25. ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে মেসোস্ফিয়ারের অবস্থান লেখো।
ans:মেসোস্ফিয়ার ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 45 km থেকে 85 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
26. মেসোপজ অংশের উষ্ণতা কত ?
ans:মেসোপজ অংশের উষ্ণতা – 92°C।
27. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে ‘অরোরা বোরিয়ালিস’ দেখতে পাওয়া যায়?
ans:বায়ুমণ্ডলের থার্মোস্ফিয়ারের অন্তর্গত আয়োনোস্ফিয়ার স্তরে।
28. মেসোস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ারের কয়েকটি উপাদানের নাম লেখো।
ans:মেসোস্ফিয়ার—N2, O2, O2, NO+। থার্মোস্ফিয়ার — O2,
O+, NO+ |
29. এক্সোস্ফিয়ারে মূলত কোন্ কোন্ গ্যাস অবস্থান করে?
ans:হাইড্রোজেন (H2) এবং হিলিয়াম (He) গ্যাস।
30. রেডিয়ো তরঙ্গের সাহায্যে যোগাযোগে কোন্ বায়ুস্তরকে কাজে
লাগানো হয় ?
ans:থার্মোস্ফিয়ারের অন্তর্গত আয়নোস্ফিয়ার স্তরটিকে।
31. ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে থার্মোস্ফিয়ারের অবস্থান লেখো।
ans:থার্মোস্ফিয়ার ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 85 km থেকে 500 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
32. থার্মোস্ফিয়ার অংশের সর্বোচ্চ উষ্ণতা কত হয় ?
ans:থার্মোস্ফিয়ার অংশের সর্বোচ্চ উষ্ণতা হয় প্রায় 1200°C |
33. থার্মোস্ফিয়ার অংশে আকাশ কালো দেখায় কেন ?
ans:থার্মোস্ফিয়ারে বাতাস প্রায় নেই বলে আকাশ কালো দেখায়।
34. কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপনের জন্য বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরটি উপযোগী?
ans:এক্সোস্ফিয়ার স্তরটি উপযোগী।
35. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে মহাকাশ স্টেশন থাকে ?
ans: এক্সোস্ফিয়ার স্তরে মহাকাশ স্টেশন থাকে।
36. বায়ুমণ্ডলের এক্সোস্ফিয়ার অংশে কোন্ কোন্ গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়?
ans: হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।
37. পদার্থের কোন্ ভৌত অবস্থায় পরিচলন স্রোত সৃষ্টি হতে পারে ?
ans: পদার্থের গ্যাসীয় ও তরল অবস্থায় পরিচলন স্রোত সৃষ্টি হতে পারে।
38. পরিচলন স্রোতের দুটি প্রাকৃতিক উদাহরণ দাও ।
ans: সমুদ্রবায়ু এবং স্থলবায়ু।
39. বায়ুপ্রবাহ বলতে কী বোঝ ?
ans: উষ্ণতার তারতম্যের জন্য সংলগ্ন অঞ্চলে বায়ুচাপের পার্থক্য ঘটলে এবং তার ফলে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ু অনুভূমিকভাবে প্রবাহিত হলে তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:(প্রতিটি প্রশ্নমান-2)
1. ‘স্থিতিশীল উন্নয়ন’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যে উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করেও দেশ ও দশের মঙ্গল করা যায়, তাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বুভুক্ষা প্রভৃতি আর্থ সামাজিক অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্ত করাই এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য।
2. মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: যে সব ব্যাকটেরিয়া বায়ুর অনুপস্থিতিতে বায়োমাসের বিয়োজন ঘটিয়ে প্রকৃতিতে মিথেন গ্যাস মুক্ত করে তাদের মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বলে।
উদাহরণ-মিথানোকক্কাস, মিথানোব্যাকটেরিয়াম ইত্যাদি।
3. ‘বায়োফুয়েল’ বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
উত্তর: বায়োমাস থেকে যে জ্বালানি উৎপন্ন হয়, তাকে বায়োফুয়েল বলা হয়।
উদাহরণ-আখ বা ভুট্টা থেকে সন্ধান প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন বায়োইথানল একটি বায়োফুয়েল যাকে গ্যাসোলিনের (পেট্রোলের) সাথে মিশিয়ে যানবাহন চালানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
4. বায়োমাস কী? বায়োমাস শক্তি বলতে কী বোঝ?
উত্তর: মৃত প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ থেকে জৈব অবশেষকে বায়োমাস বলে। বায়োমাস শক্তি হল জৈব অবশেষ থেকে বিশেষ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বায়ুর অনুপস্থিতিতে অবায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিয়োজন জ্বালানি বা বিদ্যুতের উৎস রূপে উৎপন্ন করা দাহ্য মিথেন গ্যাস।
5. সৌরশক্তিকে চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে ভাবা হচ্ছে কেন?
উত্তর: সূর্য এক বিপুল শক্তির আধার। প্রতি ঘণ্টায় সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ সূর্যরশ্মি পৌঁছায়, তাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে যে তাপশক্তি পাওয়া যাবে তা 21×1012 টন কয়লার সমান। সৌরশক্তি পূর্ণভব, প্রবহমান ও সর্বব্যাপ্ত। সূর্যের অসীম শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করার কারিগরি জ্ঞান মানুষ যেদিন আয়ত্ব করতে পারবে সেদিন পৃথিবীতে জ্বালানির আর কোনো সমস্যাই থাকবে না। তাই সৌরশক্তিকে চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে ভাবা যায়।
6. ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ কাদের বলে?
উত্তর: বায়ুমণ্ডলের যেসব গ্যাসীয় পদার্থ উত্তপ্ত পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট অবলোহিত রশ্মির কিছু অংশ শোষণ করে এবং অবশিষ্টাংশ পুনরায় পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রতিফলিত করে ভূপৃষ্ঠ ও তার সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত রাখে, তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।
উদাহরণ-কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₂), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC), ওজোন (O₃), নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O), জলীয়বাষ্প (H₂O) ইত্যাদি।
7. মিথেন হাইড্রেট কী?
উত্তর: মিথেন হাইড্রেট হল কেলাসাকার কঠিন বরফ যেখানে মিথেন অণুগুলি জলের অণু দ্বারা সৃষ্ট কেলাস গঠনের মধ্যে আবদ্ধ অবস্থায় থাকে। এর সংকেত 4CH4,23H₂O। উপযুক্ত উন্নতা এবং চাপেই কেবল এর অস্তিত্ব বজায় থাকে।
মিথেন হাইড্রেট থেকে মিথেন গ্যাস আহরণ খুব সহজ নয়। তবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান মিথেন হাইড্রেট থেকে মিথেন গ্যাস উত্তোলনে কিছুটা সাফল্য অর্জন করেছে।
8. মেরুজ্যোতি কীভাবে সৃষ্টি হয়? ‘সুমেরু প্রভা’ ও ‘কুমেরু প্রভা’ কাকে বলে?
উত্তর: থার্মোস্ফিয়ারের অন্তর্গত আয়নোস্ফিয়ারে (80-400 কিমি) থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন গ্যাসের অণুগুলি সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত উচ্চ শক্তিসম্পন্ন গামা রশ্মি এবং X- রশ্মির প্রভাবে আয়নিত হয় (O3N₂O) সেই সঙ্গে অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রনও উৎপন্ন হয়। এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলি আবার অন্য আয়নগুলি দ্বারা গৃহীত হওয়ার সময় আলোকরশ্মি বিকিরণ করে। একেই মেরুজ্যোতি বলে।
উত্তর মেরুতে সৃষ্ট মেরুজ্যোতিকে সুমেরু প্রভা এবং দক্ষিণ মেরুতে সৃষ্ট মেরুজ্যোতিকে কুমেরু প্রভা বলে।
9. ওজোনস্তরকে ‘ওজোন ছত্র’ বলার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোনস্তরকে ‘ওজোন ছত্র’ বলে। ছাতা যেমন রোদ বৃষ্টি থেকে আমাদের রক্ষা করে, ওজোনস্তর তেমন সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির পৃথিবীতে আগমনকে প্রতিরোধ করে। তাই ওজোনস্তরকে ‘ওজোন ছত্র’ বলা হয়।
10. ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহ্বর কী?
উত্তর: মানুষের কিছু ক্রিয়াকলাপের ফলে ওজোন তৈরির হার অপেক্ষা বিয়োজনের হার অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোনস্তরটি প্রায় সর্বত্র কমবেশি পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ওজোনস্তরের এই পাতলা হওয়ার ঘটনাকে ওজোনস্তরের ক্ষয় বা ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহ্বর (Ozone Hole) বলে।
11. ‘গ্রিনহাউস প্রভাব’ কী?
উত্তর: যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কয়েকটি গ্যাসীয় পদার্থ (যেমন, CO₂, CH₂, CFC, N₂O, O2, ইত্যাদি) পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপের একাংশকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে না দিয়ে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত রাখে এবং ফলস্বরূপ পৃথিবীতে জীবকুলের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।
12. গ্রিনহাউস প্রভাবের উপযোগিতা উল্লেখ করো।
উত্তর: বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত CO₂, জলীয়বাষ্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে অবলোহিত রশ্মিরূপে বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে বিলীন হতে না দিয়ে, ভূপৃষ্ঠ ও তার সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে এমন এক উষ্ণতা সীমার মধ্যে (গড়মান ~15°) উত্তপ্ত রাখে। যা মানুষসহ সমগ্র জীবজগতের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল। বায়ুমণ্ডলে যদি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি না থাকত, অর্থাৎ গ্রিনহাউস প্রভাব না ঘটত তাহলে পৃথিবীপৃষ্ঠ ও সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্ণতা হত প্রায়-30°C। এই উষ্ণতায় পৃথিবীপৃষ্ঠে জীবজগতের কোনো অস্তিত্বই থাকত না।
13. গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে?
উত্তর: বিজ্ঞাননির্ভর আধুনিক জীবনযাত্রায় মানুষের নানাবিধ ক্রিয়াকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এর প্রভাবে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্রমশ গরম হয়ে উঠেছে এবং সারা বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির এই ঘটনাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।
14.’জীবাশ্ম জ্বালানি’ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: জীবাশ্ম হল প্রাকৃতিক উপায়ে মাটি বা পাথরের অভ্যন্তরে সঞ্চিত অতি প্রাচীনকালের উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ। ভূগর্ভে প্রচণ্ড তাপ, চাপ ও ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে জীবাশ্মগুলি থেকে সৃষ্টি হয়েছে কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস-এর মতো জ্বালানি। এগুলিকে বলা হয় ‘জীবাশ্ম জ্বালানি’। জীবাশ্ম জ্বালানিগুলি হল প্রচলিত শক্তির উৎস এবং এরা অনবীকরণযোগ্য।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর: ( প্রতিটি প্রশ্নমান-5)
1. ভূতাপশক্তি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: ভূ-তাপশক্তি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি নিম্নরূপ-
সুবিধা
ভূ-তাপীয় শক্তির সুবিধাঃ
অফুরন্ত সম্পদ:
ভূ-তাপীয় শক্তি প্রবহমান ও অফুরন্ত। ফলে এই শক্তি ফুরিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পরিবেশবান্ধব শক্তি:
ভূ-তাপীয় শক্তি থেকে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা কম। তাই এটি পরিবেশবান্ধব শক্তি।
শক্তির নিয়মিত যোগান:
সারাবছর ধরে ভূ-তাপ শক্তির নিয়মিত যোগান পাওয়া যায়। ফলে উৎপাদনে যেমন বিঘ্ন ঘটে না, তেমনি এর অবাধ ব্যবহার সম্ভব।
ভূ-তাপীয় শক্তির অসুবিধাঃ
অধিক প্রাথমিক ব্যয়:
ভূ-তাপীয় শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক ব্যয় অনেক বেশি।
উন্নত প্রযুক্তির অভাব:
ভূ-তাপীয় শক্তি উৎপাদনের জন্য উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োজন, যা অধিকাংশ দেশেই সহজলভ্য নয়।
স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতা:
এ জাতীয় শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির উৎপাদন ক্ষমতা কম। ফলে এই ধরনের ভূ-তাপ শক্তিকেন্দ্র থেকে শুধুমাত্র স্থানীয় এলাকাতেই বিদুতের চাহিদা পূরণ সম্ভব।
2. জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণ করা বিশেষ প্রয়োজন, কারণ-
(i) জীবাশ্ম জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এর ভান্ডার ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরি হতে ভূ-গর্ভে কোটি কোটি বছর সময় লাগে তাই যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করলে অদূরভবিষ্যতে পৃথিবীর সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন-কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি) নিঃশেষিত হবে। যেহেতু মানব সভ্যতার উন্নয়নের প্রতিটি পদক্ষেপ এই শক্তি উৎস ব্যতিরেকে সম্ভব নয়, তাই জীবাশ্ম জ্বালানির সংরক্ষণ অতি প্রয়োজন।
(ii) জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার কমালে তার দহনে উৎপন্ন CO₂ গ্যাসের পরিমাণও বাতাসে কম হবে ফলে বায়ুদূষণ কম ঘটবে।
(iii) জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়।
(iv) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ হ্রাস পাবে, ফলে বিশ্বউয়ায়নের মাত্রা কমবে।
3. বায়োফুয়েল কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকারের উদাহরণ ও ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তর: বায়োমাস থেকে উৎপন্ন জ্বালানিকে বায়োফুয়েল বলা হয়। বায়োফুয়েল তিন প্রকার, যথা- (i) কঠিন বায়োফুয়েল, (ii) তরল বায়োফুয়েল এবং (iii) গ্যাসীয়
বায়োফুয়েল।
(i) কঠিন বায়োফুয়েল: কাঠ, বাঁশ, খড়, গৃহস্থালির আবর্জনা প্রভৃতি কঠিন বায়োফুয়েলের উদাহরণ। এগুলি মূলত গ্রামীণ এলাকায় রান্নার কাজে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
(ii) তরল বায়োফুয়েল: বায়োইথানল (ভুট্টা ও আখের ছিবড়ার সন্ধান প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন) বায়োডিজেল (উদ্ভিজ্জ তেল ও ফ্যাটের ট্রান্স-এস্টারিফিকেশনে উৎপন্ন) প্রভৃতি তরল বায়োফুয়েলের উদাহরণ। বায়োইথানল সরাসরি গাড়ির জ্বালানিরূপে অথবা পেট্রোলের সঙ্গে মিশিয়ে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হয়। বায়োডিজেল মূলত শীতপ্রধান দেশে ঘর গরম রাখতে ব্যবহৃত হয়।
(iii) গ্যাসীয় বায়োফুয়েল: গোবর গ্যাস গ্যাসীয় বায়োফুয়েলের উদাহরণ। এটি মূলত জ্বালানিরূপে ও আলো উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।হয়।
4. সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধা কী কী?
উত্তর: সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি নিম্নরূপ-
(i) সৌরশক্তি প্রবহমান ও অফুরন্ত, নিঃশেষ হবার সম্ভাবনা নেই, তাই ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যেতে পারে। বৈজ্ঞানিকদের মতে পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা সৌরশক্তির সাহায্যে পূরণ করা সম্ভব হবে।
(ii) সৌরশক্তি ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় না। জীবাশ্ম জ্বালানিগুলি থেকে শক্তি উৎপাদনের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড ইত্যাদি নির্গত হয় যা বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের মূল কারণ। তাই সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশের সংরক্ষণ ও ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে।
(iii) সৌরপ্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে অতি সাধারণ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, ফলে ব্যবহার করতে সুবিধা হয়।
(iv) প্রত্যন্ত পাহাড়ি বা দুর্গম অঞ্চলে, কম মূলধনে ঝুঁকিহীনভাবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।